নাপা সিরাপের একটি ব্যাচ পরীক্ষার নির্দেশ ঔষধ প্রশাসনের তদন্ত কমিটির কাজ শুরু
শিমুল মাহমুদ ও তৌহিদুর রহমান : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে প্যারাসিটামল সিরাপ- নাপা সেবনে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ আসার পর শনিবার সারাদেশের পাইকারি ও খুচরা দোকান পরিদর্শন করে একটি ব্যাচের ওষুধ পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঐ দুই শিশুর স্বজনদেন সঙ্গে কথা বলে।
ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আকিব হোসেন। তার সঙ্গে অধিদপ্তরের দুইজন উপ-পরিচালক ও দুইজন সহকারী পরিচালক এবং একজন পরিদর্শক আছেন।
তদন্ত কমিটি মৃত দুই শিশুর মা লিমা বেগম ও চাচা উজ্জল মিয়া ও দাদি লিলুফা বেগমের সাক্ষ্য নেন।
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. আকিব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, যে সিরাপটি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। একই ওষুধের অন্যান্য ব্যাচের ওষুধ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
তিনি আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, অধিদপ্তরের বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয় নাপা সিরাপের ঐ ব্যাচের ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করছে। তবে ঐ ব্যাচের ওষুধ বিক্রি বন্ধ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
এরআগে শনিবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, ‘বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালসের প্যারাসিটামল ১২০ মিলি গ্রাম ও ৫ মিলি গ্রাম সিরাপের (ব্যাচ নং ৩২১১৩১২১, উৎপাদন তারিখ ১২/২০২১, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ১১/২০২৩) ওষুধ সেবন করে একই পরিবারের দুই শিশু মারা গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে সারাদেশে বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তাকে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় অবস্থিত পাইকারি ও খুচরা ফার্মেসি পরিদর্শন করে ঐ ব্যাচের নমুনা পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হলো।’
মো. আইয়ুব হোসেন আরও বলেন, এ ঘটনা জানার পর আমাদের পক্ষ থেকে এক টিম করে দিয়েছি, যারা এ ব্যাচটা নিয়ে সারাদেশের বিস্তারিত তথ্য দিবে। একই সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে একটা টিম করা হয়েছে। সেখানে দেখা হবে, দুটি বাচ্চার মৃত্যু নাপা সিরাপ বিষক্রিয়ার কারণে না অন্য কোনো কারণে হয়েছে। এর সঙ্গে বাচ্চা দুটির ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার বলেন, মৃত্যুর কারণ অনেক কিছু থাকতে পারে। নাপা সিরাপ সেবনে মৃত্যু হয়েছে এমনটা সুনিদিষ্টভাবে বলা ঠিক হবে না। সিরাপে যদি ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো হয় হয়তো হতেও পারে। এর বাইরে যদি মেয়াদ উত্তীন না হয় তাহলে ক্ষতি হওয়ার কোনো কারণ নাই।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. সাফি আহমেদ জানান, নাপা বা প্যারাসিটামল সিরাপে বিষাক্ত ডাই ইথানল গ্লাইকল কেমিক্যাল ব্যবহারে শিশুদের কিডনী বিকল কারণ হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত ডোজে লিভার বিকল হতে পারে। তবে এত দ্রুত মারা যাওয়ার আশঙ্কা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক এবিএম ফারুকের সঙ্গে বলেন, যে ওষুধ খেয়ে দুটি বাচ্চা মারা গেল, সেটির নমুনা যদি আমাদের কাছে আসে তখন হয়তো আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলতে পারব। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা ধারণা করছে, ওষুধটি নকল।