রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় ইউরোপজুড়ে সংকট
রাশিদ রিয়াজ : শুধু রুশ তেল ও গ্যাসের ওপর ইউরোপের দেশগুলো যে নির্ভরশীল তা নয়, এসব দেশের শপিংমলে পণ্য সংকট ও মূল্যস্ফীতি এমনকি গাড়ির অভাব দেখা দিয়েছে। অনেকে সংকট এড়াতে অধিক পণ্য কিনে মজুত করায় পরিস্থিতি আরো সংকটময় হয়ে উঠেছে। আরটি
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় ইউরোপে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে তেলের দাম। ফলে ইতিমধ্যে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কৃষক ও ট্রাক চালকরা জালানি তেল কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। কৃষি সেচ থেকে শুরু করে ট্রাক্টর চালু রাখতে জালানি তেলে যে বাড়তি খরচ হচ্ছে তা যান্ত্রিক কৃষির খরচ অনেকখানি বৃদ্ধি করেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে উৎপাদিত ফসলের ওপর। বাণিজ্য খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতির ওপর।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ডিজেল ও গ্যাসোলিনের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত সোমবার স্পেনে হাজার হাজার ট্রাকচালক অনির্দিষ্টকালের জন্যে ধর্মঘট শুরু করে। এরফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ট্রাকচালকরা পিকেটিংয়ে অংশ নেয়। স্পেনে কিছু কিছু ট্রাক কোম্পানি মাল পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার পর কর্মসংস্থানে ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে ইতালিতে এক লিটার গ্যাসোলিন বা ডিজেলের দাম দুই ইউরোর বেশি। ফ্রান্সে জালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া বিক্ষোভ হয়েছে। সেন্ট্রাল এ্যাথেন্সে শতশত কৃষক প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে জালানিতে ভর্তুকি দেওয়ার জন্যে সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে। খোদ মার্কিন মুল্লুকে ভোক্তারা গ্যাসোলিন কিনতে দ্বিগুণ খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দেশটিতে জালানির মূল্য হু হু করে বেড়ে গিয়েছে।
ইউরোপের দেশগুলোতে ট্রাক ধর্মঘট চলতে থাকায় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। দোকানপাটে ক্রেতারা তাদের কাঙ্খিত পণ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। খাদ্য থেকে শুরু করে মৌলিক চাহিদা পূরণের পণ্যগুলোর সংকটে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। খুচরা বিক্রেতাদের বিক্রিতে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা নিত্যনৈমিত্তিক পণ্য নির্ধারিত পরিমানের বেশি বিক্রি করতে পারবেন না। সরবরাহে সংকট যাতে সৃষ্টি না হয় সে কারণে এ ধরনের বিধি আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব দেশের সরকার নাগরিকদের আতংকে অতিরিক্ত পণ্য কিনতে বারণ করছে। কিন্তু বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন ক্রেতাদের মাঝে বাজার নিয়ে যে আস্থার অভাব সৃষ্টি হয়েছে তা বরং আসছে দিনগুলোতে আরো কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে।
এদিকে বিশ^ব্যাপী খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কোভিড মহামারিতে এমনিতে খাদ্যমূল্যস্ফীতির পর তা স্বাভাবিক হওয়ার আগেই ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। গম, সূর্যমূখী বীজ, ডাল ও তেলবীজের প্রধান সরবরাহকারী দেশ দুটি হচ্ছে ইউক্রেন ও রাশিয়া। বিশেষ করে সার সংকটের প্রভাব কৃষি পণ্য উৎপাদনের ওপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া ফেলেছে। বেলারুশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় দেশটির পক্ষে আন্তর্জাতিক বাজারে সার রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। ইতালিতে পাস্তা, আটা ও সব্জীর দাম দ্রুত বাড়ছে, বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। গত নভেম্বরের পর রুটির মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এক কিলো রুটি কিনতে গুণতে হচ্ছে ৮ ইউরো। জার্মানির সুপারমার্কেটগুলোতে তেল ও আটা খুঁজে পাওয়া ভার। কয়েক মাস আগে ভোজ্যতেলের একটি বোতল ১ ইউরোতে বিক্রি হলেও এখন এর মূল্য ২ ইউরো ছাড়িয়ে গেছে।
ইউক্রেনের ওপর নিষেধাজ্ঞায় গাড়ির মূল্য বেড়েছে। কোভিডের কারণে এর আগে সেমিকন্ডাক্টর সংকটে গাড়ির মূল্য বেড়ে যায়। এখন ফের যুদ্ধের কারণে গাড়ির দাম বাড়ছে। গাড়ি ছাড়াও নিওন গ্যাস, এ্যালুমিনিয়াম, প্লাটিনিয়াম ও প্যালাডিয়াম রফতানিতে ইউক্রেন ও রাশিয়া শীর্ষে অবস্থানকারী দেশ। স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি ও গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীরা জরুরি বৈঠক ডাক দিয়েছেন এহেন পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় ঠিক করতে।