আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে ঘণ্টায় ৫৩ ডায়রিয়া রোগী
শাহীন খন্দকার : ঢাকার আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি)তে গত আড়াইদিনে ডায়রিয়ায় সংক্রমিত হয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ আশেপাশের জেলা উপজেলা থেকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে ৫ হাজার ৪০৭ জন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ। এদিকে গত আটদিনে ভর্তি হয়েছে আট হাজারের অধিক রোগী।
ডিউটিরত চিকিৎসক ক্লিনিকাল ফেলো আলী আমীন নবীন বলেন, গত সাতদিন ধরে দৈনিক ১১-১২শ ওপরে থাকছে ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে থাকছে রোগী। যাদের অধিকাংশ ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এঅবস্থায় রোগী সামলাতে চিকিৎসক নার্সসহ অন্যান্য স্টাফরা হিমশিম খেতেও হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ায় প্রতি ঘণ্টায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মহাখালী হাসপাতালে ৫০ জনের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন। আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ১ সপ্তাহ ধরেই ডায়রিয়ার এই প্রকোপ চলছে। গত বুধবার (২৩ মার্চ) ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মোট ১ হাজার ২৭২ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। সে হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৫৩ জন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে ডায়রিয়া পরিস্থিতিতে এসব তথ্য জানা গেছে। চিকিৎসক আলী আমীন নবীন আরো বলেন, ২০০৮ সালের পরে এই প্রথম এতো সংখ্যক রোগী আমরা হাসপাতালে প্রতিদিন পাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনসহ করোনাকালীন সময় আমরা অতিবাহিত করছি এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসাতে এক সঙ্গে অনেক মানুষ বাহির হয়ে আসছে।
শুধু তাই নয় তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না,নিয়মিত কোভিড চলাকালীন সময়ে যেভাবে হাত ধোঁওয়া, মাস্ক ব্যাবহারসহ আগের মতো হাত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে খাবার খাচ্ছেনা। শুধু তাই নয় তারা বাহিরের খোলা খাবার ও খাচ্ছে সেই সঙ্গে হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে সম্ভবত ডায়রিয়ায় মানুষ বেশী সংক্রমিত হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, ডায়রিয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বাহিরের খোলা খাবারসহ খাবারের আগে হাত ধুইয়ে নেওয়া, প্রকৃতির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরে হাত সাবান দিয়ে পরিস্কার করা। সেই সঙ্গে খাবার পানি ফুটিয়ে খাওয়া এবং স্বাভাবিক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলেই রোগটি থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব। সব জায়গা থেকেই রোগী পাচ্ছি,বেশীর ভাগ রোগী রাজধানীর মোহম্মদপুর,মীরপুর আদাবর, শেখেরটেক, যাত্রবাড়ি, নরসিংদী, সাভার, মানিকগঞ্জ থেকে রোগী আসছে বেশী। দক্ষিণখান এলাকার রোগীর সংখ্যা একটু বেশি ছিল। আবার ঢাকার বাইরে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টঙ্গী, জয়দেবপুর এসব এলাকা থেকেও ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষ বেশি আসছেন।
চিকিৎসক নবীন আরো বলেন, এই ডায়রিয়াতে সংক্রমিতদের ফার্মেসী থেকে অ্যান্টিবাইটিক না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, চিকিৎসককের পরামর্শে ওষধ সেবন করাই ভালো। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবাইটিক মেডিসিনের প্রয়োজন হয় না, বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে।
ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখামাত্র খাবার স্যালাইন যদি পরিমান মতো নিয়ম অনুযায়ী খেলে অনেকাংশে হাসপাতালেও রোগীকে আসতে হয় না। ইচ্ছে করলে ঘরে নিজেও স্যালাইন তৈরী করে খেতে পারেন যেমন,আদা লিটার পরিস্কার ফুটানো পানির মধ্যে এক প্যাকেট স্যালাইন পুরোটা ভালো করে গলিয়ে বড়দের জন্য প্রতিবার পায়খানার পরে একগ্লাস আর ছোটদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে। বাচ্চাদের ওজন কতোটুকু এবং শারীরিক অবস্থাসহ পানি শূন্যতা কেমন এক কথায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুর চিকিৎসা দেওয়া উচিত।
এছাড়াও কোন কারণে প্যাকেটজাত স্যালাইন পাওয়া না গেলে সেই ক্ষেতে একমুঠো গুড় বা চিনি তিন চিমটি লবনে আধালিটার পানির মিশ্রণেও স্যালইন তৈরী করে খাওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। তবে পানিটা অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে। আরো বলেন, এই হাসপাতালে নিয়মিত ২১জন চিকিৎসক কাজ করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বর্তমানে প্রচুর পরিমান চিকিৎসক নিয়ে আসা হয়েছে চলমান পরিস্থিতি সামাল দিতে।
একটি সূত্র জানিয়েছে আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে গত সাত দিনে ৮ হাজার ১৫২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ২০১৮ সালের এপ্রিলেও এরকম পরিস্থিতি হয়েছিলো ডায়রিয়া মহামারি আকার ধারণ করেছিলো মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো।
আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, ডায়রিয়া সংক্রমিত রোগী সাধারণত বছরে দুই সিজনে এক শীতে আরেক গরমের সময়ে বারে। গড়ে প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ রোগী সব্র্চ্চ একহাজার । এবার রেকড ছাড়িয়েছে ১২০০ জনে। তিনি বলেন, ২২ মার্চ রাতে রোগী ১২৭২ জন, ২৩ মার্চ ১০৩৩ জন ভর্তি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ২৪ মার্চ দুপুর পর্যন্ত ৫০২ জন।
সাধারণ মানুষের কী করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পরামর্শ হলো, বাইরের কোনো খাবার খাবেন না। যেখান-সেখান থেকে পানি খাবেন না। পানি যদি খেতে হয় তাহলে সেটি ফোটানো হতে হবে। অন্যথায় নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি যে পানি পান করছেন, সেটি জীবাণুমুক্ত।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আইসিডিডিআর’বির ঢাকা ও চাঁদপুরে অবস্থিত মতলব হাসপাতাল প্রতি বছর দুই লাখেরও বেশি রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে।