শাহজানপুরে আ. লীগ নেতা টিপু ও কলেজছাত্রী হত্যায় মামলা হত্যা হুমকি পেয়ে প্রশাসনের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছিলেন টিপু, পাননি সাড়া
সুজন কৈরী : শুক্রবার ঢাকা মেডিকেলে হাসপাতালে নিহতের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি বলেন, জাহিদুল ইসলাম টিপুকে এর আগেও কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়। এজন্য তিনি অনেকবার নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন কোনো সাড়া দেয়নি।
প্রসঙ্গত, ফারহানা ইসলাম ডলি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত নারী আসনের (১১, ১২, ১৩ নম্বর) ওয়ার্ড কাউন্সিলর। স্বামী হত্যায় তিনি বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে ডলি উল্লেখ করেন, আমার স্বামী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। আমার বাবার মতিঝিল কাঁচাবাজার এলাকায় একটি রেস্টুরেন্ট আছে। আমার স্বামী রেস্টুরেন্টটি দেখাশোনা করতেন। আমার স্বামী বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগ কমিটিতে ১০ বছর সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। ঐ সময় দলীয় কিছু কোন্দল ছিলো। চার-পাঁচ দিন আগে আমার স্বামীকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীরা মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী টিপুর গাড়িচালক মুন্না হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানান, মতিঝিলের এজিবি কলোনী কাঁচাবাজার এলাকা থেকে বাসায় ফেরার পথে খিলগাঁও রেলগেটের আগে যানজটে তাদের গাড়ি আটকে পড়ে। এর মধ্যেই হেলমেট ও মাস্ক পড়া এক ব্যক্তি হেঁটে গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এরপর গুলি ছুড়তে ছুড়তেই সে পালিয়ে যায়।
টিপুর সাদা রঙয়ের মাইক্রোবাসের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে রক্তের ছোপ। চালকের বাম পাশের আসনে ছিলেন টিপু। ঐ আসনের পাশে জানালার কাঁচ গুলিতে ঝাঁঝড়া হয়ে গেছে। আর চালকের পাশের দরজায় রক্ত জমাট বাধা দেখা যায়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, টিপুর গলা ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অনন্ত ১১টি গুলি বিদ্ধ হয়েছে। মুন্নার বাম হাতে গুলি লেগেছে। শুক্রবার দুপুরে নিহত দুইজনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
জানা গেছে, টিপুর শরীর থেকে ৭টি গুলি বের করা হয়েছে। প্রীতির শরীরে কোন গুলি পাওয়া যায়নি। কারণ গুলিটি শরীরে বিদ্ধ হয়ে বের হয়ে গেছে।
মর্গের সামনে উপস্থিত টিপুর বন্ধু মো. মিজানুর রহমান জানান, টিপু ভাই চালকের পাশে বসা ছিলেন, আমরা দুইজন পেছনে ছিলাম। শুধু বৃষ্টির মতো গুলি আসছিলো। সর্বোচ্চ দেড় মিনিট সময় ধরে হত্যাকারী গুলি ছুড়ে। এর পর দৌড়ে পালিয়ে যায়। আমরা কাউকে চিনতেও পারেনি। গুলি লাগার পর টিপু কোনো কথা বলেনি।
এ সময় গাড়ির চালক মুন্নার হাতেও গুলি লাগলেও সে এক হাতে গাড়ি চালিয়ে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে যায়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।
শাজাহানপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ঠাকুর দাশ বলেন, দুর্বৃত্তরা খুব অল্প সময়ে ১২ রাউন্ড গুলি ছুড়ে কিলিং মিশনটি শেষ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গুলিতে নিহতের ঘটনায় আমরা বেশ কিছু ফুটপ্রিন্ট ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। বেশ কিছু মোটিভও আমরা হাতে পেয়েছি।
তিনি বলেন, র্যাব ছাড়াও সিআইডি, থানা পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একাধিক টিম কাজ করছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর শাহজাহানপুরে বৃহস্পতিবার রাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪) ও পুরান ঢাকার বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফরিন প্রীতি (২৪) নিহত হন।