আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও সুদহার আমানতে ৮, ঋণে ১৩ শতাংশ করার প্রস্তাব
মো. আখতারুজ্জামান : বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে ঋণে সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ আর আমানতে ৬ শতাংশ। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও সুদহার সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সেটা ব্যাংকগুলোর সুদহারের ন্যায় নয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণে সুদহার সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ এবং আমনতে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ১২ থেকে ১৫ শতাংশ সুদহার দিয়ে থাকে। অন্যদিকে ঋণের বিপরিদে সুদহার ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি নিয়ে থাকে। সুদহার নির্ধারণ করে দিলে এই খাতে প্রতিষ্ঠান আর নিজেদের উচ্ছেমত সুদ নিতে পারবে না। আর এটা করে কারা হচ্ছে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে করে আরও বিনিয়োগ বাড়ে। বাড়ে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান। গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের প্রস্তাবের আলোকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ২৪ মার্চ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমানত-ঋণে সুদহার নির্ধারণ করে দেয়ায় কোনো ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ২০২১ সাল শেষে সব ব্যাংকই মুনাফা করেছে। সুদের হার নির্ধারণ করে দেয়া না হলে করোনার দুই বছর পর কোনো উদ্যোক্তা খুঁজে পাওয়া যেত না। তফসিলি ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার নির্দিষ্ট করে দেয়ার ফলে কেউ ইচ্ছা মতো সুদ নিতে পারে না। ফলে কোনো ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আগে ১৮-২০ শতাংশ সুদ নেয়া হতো। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। সুদহার নির্ধারণ করে দেয়ায় ব্যাংকগুলো ভালো আছে। অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্য দেয়ার তিনদিন পরেই এমন সিদ্ধান্ত নিলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকগুলো চলতিসহ সব ধরনের আমানত নিতে পারে। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৬ মাসের কম মেয়াদি কোনো আমানত নিতে পারে না। আবার পরিচিতি কম থাকায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনেকে আমানত রাখতে চান না। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে পিকে হালদারসহ অনেকে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়ার তথ্য ফাঁস হয়েছে। কোনো-কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান আগের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এতে করে সাধারণ আমানতকারীদের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও এখন এসব প্রতিষ্ঠানে আগের মতো টাকা রাখতে চাইছে না। আমানত টানতে অনেক প্রতিষ্ঠান ১২ থেকে ১৫ শতাংশ সুদ অফার করছে। আর ঋণ দিচ্ছে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত সুদে। এতো সুদে আমানত গ্রহণ ও ঋণ বিতরণ ব্যাংকের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এরকম অবস্থায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও ঋণ ও আমানতে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা বেধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, পরিচালনা পর্ষদে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদহারের সীমা আরোপের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের প্রস্তাবনায় আমানতে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ শতাংশ সুদহারের সীমা আরোপের কথা বলা হয়েছে। আর ঋণে কোনো অবস্থায় যেন ১২ থেকে ১৩ শতাংশের বেশি সুদ নিতে না পারে তা বলা হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে সার্কুলার জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। আর গতবছরের আগস্ট থেকে ব্যক্তি পর্যায়ের মেয়াদি আমানতে মূল্যস্ম্ফীতির চেয়ে কম সুদ না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংক খাতের আমানতের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। আর ঋণের গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে যেখানে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং ঋণে ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এর মানে ব্যাংকগুলোর ঋণের গড় সুদহারের তুলনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতের গড় সুদও বেশি।