ভারতীয় ঋণের ৯৬ কোটি ডলার ছাড়
অর্থনীতি ডেস্ক : ইআরডি জানায়, ভারত প্রায় এক যুগ আগে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে এর মধ্যে ২০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে গণ্য করে দেশটি। শুরু থেকেই ভারতীয় ঋণের অর্থ ছাড়ের গতি ধীর। সম্প্রতি তাতে কিছুটা গতি এলেও এখন পর্যন্ত প্রথম এলওসির পুরো টাকাই ছাড় হয়নি। তৃতীয় এলওসির চুক্তির পরও প্রায় ৪ বছর পার হয়ে গেছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তিন ধাপে বাংলাদেশকে ৯৮০ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। এর মধ্যে দেশটি ঋণ ছাড় করেছে ৯৬ কোটি ডলার। তবে প্রতিশ্রুতির এই ১৩ শতাংশ ছাড়ের সিংহভাগই এসেছে এক যুগ আগের প্রতিশ্রুত প্রথম এলওসি (লাইন অব ক্রেডিট) থেকে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য বলছে, ভারতের ছাড়কৃত ঋণের পরিমাণ দেশি অর্থে দাঁড়ায় ৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকার মতো। যদিও প্রতিশ্রুতির পরিমাণ প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা। দেশটির ঋণে তিন দফায় মোট ৪৫টি প্রকল্পের মধ্যে শেষ হয়েছে মাত্র ১৪টি। প্রতিবেশী দেশটির প্রতিশ্রুত ঋণের অর্থপ্রাপ্তি আরও দ্রুত করা এবং এর আওতায় নেয়া প্রকল্পগুলোর কাজে গতি বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে রোববার বৈঠক করেছে ইআরডি। শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। বৈঠকে প্রকল্প বাস্তবায়নে যুক্ত মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, ইআরডি ও ভারতীয় হাইকমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
ইআরডি জানায়, ভারত প্রায় এক যুগ আগে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে এর মধ্যে ২০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে গণ্য করে দেশটি। শুরু থেকেই ভারতীয় ঋণের অর্থ ছাড়ের গতি ছিল ধীর। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাতে কিছুটা গতি এলেও এখন পর্যন্ত প্রথম এলওসির পুরো টাকাই ছাড় করেনি দেশটি। তৃতীয় এলওসির চুক্তির পরও প্রায় ৪ বছর পার হয়ে গেছে। ইআরডি’র এশিয়া উইং প্রধান শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেন, এ বিষয়ে আমরা বৈঠক করেছি। ঋণ ছাড়ের গতি সামনে আরও বাড়বে।
ইআরডি বলছে, বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ অন্যান্য সংস্থার ঋণের মতো নয় ভারতীয় ঋণ। অন্যান্য সংস্থা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির পর ঋণচুক্তি সই করে। কিন্তু ভারত প্রথমে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কোন কোন খাতে ঋণ দেবে। এরপর ঠিক হয় প্রকল্প। পরে প্রকল্পগুলোর বিষয়ে ঋণচুক্তি শেষে ডিপিপি তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কাজ ধরা হয়। আবার কোনও প্রকল্পে ভারত রাজি না হলে নতুন প্রকল্প যুক্ত করতেও বার বার আলোচনা চালিয়ে যেতে হয়। এতে ঋণ পেতে দেরি হয়। ২০১০ সালে ভারতের প্রতিশ্রুত প্রথম এলওসি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি ডলার। এর থেকে দেশটি অর্থ ছাড় করেছে ৬৮ দশমিক ৬ কোটি ডলার। এখনও বাকি আছে ১২ কোটি ডলারের মতো। এই এলওসির আওতায় নেয়া ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে ১২টি শেষ হয়েছে, তিনটি চলমান। দুটি শেষ হবে চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২)।
২০১৫ সালে দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ২০০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি সই করে ভারত। এর মধ্যে অর্থ ছাড় হয়েছে ১৭ দশমিক ২৬ কোটি ডলার। এ দফার ঋণে নেয়া ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে দুটি শেষ হয়েছে, বাকিগুলো চলমান। সাম্প্রতিক সময়ে ছাড় হওয়া ঋণের বেশিরভাগই এই এলওসির। ২০১৭ সালের শেষ দিকে ভারতের সাবেক অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রয়াত অরুণ জেটলির সফরে তৃতীয় এলওসির আওতায় ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি হয়। শেষ ধাপের প্রতিশ্রুত ঋণের মধ্যে অর্থ ছাড় হয়েছে ১০ দশমিক ১৩ কোটি ডলার। তৃতীয় ঋণের আওতায় নেয়া প্রকল্পগুলোর তেমন অগ্রগতি নেই। ১৬টি প্রকল্পের মধ্যে ৫টি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুমোদন দিয়েছে। বাকিগুলো অনুমোদনের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
তবে কোভিড-১৯সহ নানা কারণে এলওসি ঋণ ছাড়ে বেশি বিলম্ব হয়েছে বলে মনে করে ইআরডি। এখন পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে আসায় অর্থ ছাড়ে গতি আসবে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১০১ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে ভারত। ইতোমধে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া কনস্ট্রাকশন অব নিউ ডুয়েলগেজ রেললাইন ফ্রম বগুড়া টু সিরাজগঞ্জ প্রকল্পে ভারত ঋণ দেবে ৩৭ কোটি ৯২ লাখ ডলার ফোর লেনিং অব রামগড় টু বারইয়ারহাট রোড (৩৫ কিলোমিটার) প্রকল্পে ৮ কোটি ডলার; ‘মডার্নাইজেশন অব সিটি স্ট্রিটলাইট সিস্টেম অ্যাট ডিফারেন্ট এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন’ প্রকল্পে ২ দশমিক ৫ কোটি ডলার এবং ‘আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট’ প্রকল্পে ৫৩ কোটি ডলার ঋণ দেবে ভারত। মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে এস্টাবলিশমেন্ট অব দ্য স্পেশাল ইকোনমিক জোন (ইন্ডিয়া এসইজেড) অ্যাট মিরসরাই প্রকল্পে সাড়ে ১১ কোটি ডলার ঋণ দেবে ভারত। সূত্র : নিউজবাংলা