আগামী বছর থেকে খাদ্যে ২ শতাংশের বেশি ট্রান্স ফ্যাট থাকলেই লাখ টাকা জরিমানা
মো. আখতারুজ্জামান : খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে প্রবিধানমালা-২০২১ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, যা বাস্তবায়ন হবে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে। আর এটা বাস্তবায়ন হলে খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা ২ শতাংশের বেশি থাকলে ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের সচেতনা বৃদ্ধির বিষয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
সরকারি সংস্থা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ জানান, খাদ্যে টেন্স ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে প্রবিধানমালা-২০২১ প্রকাশ করেছি। এটি বাস্তবায়ন করা হবে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বলে দেয়া হয়েছে তারা নিজেরাই যেন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তারা এ বিষয়ে কতটুকু প্রস্তুতি নিয়েছে তা জানার জন্য তাদের সঙ্গে মতবিনিয়ম করে জানবো। আমরা যে সব কিছু করে দিবো তা নয়। ২০২৩ সালের পর থেকে প্রবিধানমালা বাস্তবায়ন করার বিষয়ে বনস্পতি (ডালডা) উৎপদনকারি কোম্পানিগুলো ভালোভাবেই জানে।
তিনি বলেন, যারা বনস্পতি উৎপাদনে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা ২ শতাংশের নিচে রাখতে পারে তারা কমপ্লান্সে থাকতে পাবে। অন্যসব কোম্পানি নন-কমপ্লান্স হিসেবে গণ্য হবে। ব্যবসায়ীদের যদি কোনো চাওয়া পাওয়া থাকে তা সরকারের কাছে দাবি করতে পারে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের কথা বলতে পারে। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ফোরাম রয়েছে। সেইসব ফোরামে কথা বলতে পারে। বিভিন্ন পর্যায়ে তারা আলোচনা করতে পারে। তাদের প্রস্তুতি নাতে নিতে পারে। আমরা শুধু তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে জানবো যে তারা কতটুকু প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। রোজার পরে যারা বনস্পতি উৎপাদনকারি এবং ব্যবহারকারিদের (হোটেল, রেস্তোরাঁ, বেকারি পণ্য উৎপাদনকারি) সঙ্গে বসার জন্য কয়েকটি প্রোগ্রামের পরিকল্পনা রয়েছে।
আমরা বিভিন্ন ল্যাবরেটরির সঙ্গে কথা বলবো যাতে করে তারা আমাদের বাজারে উৎপাদিত পণ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা ২ শতাংশের নিচে আছে কি-না তা পরীক্ষা নিরিক্ষা করে। ট্রান্স ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে আমাদের রোডম্যাপে সংশ্লিটদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে।
মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, ট্রান্স ফ্যাটের বিষয়ে ভোক্তাদের আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানাচ্ছি। তবে এ বিষয়ে আমাদের আলাদা করে কোনো বাজেট নেই। ফলে অনেক ফলাও করে যে জানাবো সেটার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, আমরা এর আগে বিভিন্ন বিষয়ে অনেক প্রবিধানমালা করেছি সেখানে ব্যবসায়ী বা সংশ্লিষ্টদেরকে কোনো সময় দেয়া হয়নি। ট্রান্স ফ্যাট অনেক বড় বিষয়ে তাই আমরা ব্যবসায়ীদেরকে কিছুটা সময় দিয়েছি।
ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতির জন্য যা প্রয়োজন সেটা তারা নিবে। আর আমাদের যে করনীয় তা আমরা এই কয়েক মাসের মধ্যে করে ফেলবো। তিন চার মাস আগে আমরা প্রবিধানমালা প্রকাশ করেছি। সেইসঙ্গে একটি রোড ম্যাপও করে দিয়েছি।
২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পরে দেশের বাজারে সব তেল ও খাদ্য পণ্যে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশে মধ্যে সীমাবন্ধ রাখতে হবে। নির্দিষ্ট ওই সময়ের পর মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাট ব্যবহার হবে দ-নীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। কেউ এই বিধান না মানলে তাকে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদ- বা ১২ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ- দেওয়া হবে।
বেশিরভাগ ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয় শিল্প প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। প্যাকেটজাত, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও বেকারি পণ্যে বিদ্যমান ট্রান্স ফ্যাট হলো এক ধরনের স্নেহ জাতীয় খাদ্য উপাদান। অতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণে খারাপ কোলেস্টেরল রক্তবাহী ধমনিতে জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। এতে হৃদরোগসহ বেশকিছু রোগের ঝুঁকি বাড়ে। আর বাংলাদেশে খাবারে ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল (পিএইচও)। এই উপাদান ডালডা ও বনস্পতি নামে পরিচিত। শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে রাস্তার পাশের দোকানে তৈরি খাবারেও এ ডালডা ব্যবহৃত হয়।