জীবিকা সুরক্ষায় ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধারের অভিনব উদ্যোগ
অর্থনীতি ডেস্ক : সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ মানুষ ও প্রাণিজগতের জন্য কতটা উপকারী, সে বিষয়ে কতটা সচেতনতা রয়েছে? আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় চাষবাসসহ একাধিক জীবিকা সুরক্ষায় ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধারের অভিনব উদ্যোগ চলছে।
সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ মানুষ ও প্রাণিজগতের জন্য কতটা উপকারী, সে বিষয়ে কতটা সচেতনতা রয়েছে? আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় চাষবাসসহ একাধিক জীবিকা সুরক্ষায় ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধারের অভিনব উদ্যোগ চলছে। প্রত্যেক সপ্তাহে কাডিয়াতু কুইয়াটে ও আডেসিনা ডেভিড গাম্বিয়া নদীর ছয়টি জায়গায় পানির উপর ও নীচের ইকোসিস্টেম থেকে পরিবেশ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেন। প্রত্যেকটি পরিবর্তন নিখুঁতভাবে নথিভুক্ত করা হয়। কাডিয়াতু বলেন, এই মুহূর্তে আমি এখানকার তথ্য সংগ্রহ করছি, যা হলো তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বাতাসের গতি, বায়ুর শীতের মাত্রা, উচ্চতা, শিশির বিন্দু এবং বাতাসের দিক।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নদীতীরের অনেক মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন করে তুলছে। বহু শতাব্দী ধরে তারা ছোট আকারে মাছ ধরে ও চাষবাস করে জীবনযাপন করতো। ম্যানগ্রোভ পানি থেকে লবণ দূর করে তা সম্ভব করতো। কিন্তু সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে চলায় ও আরও ঘনঘন খরার কারণে নদীর মধ্যে লবণের মাত্রা এত বেড়ে গেছে, যে তীরের অনেক গাছ মরে গেছে। ফলে ফাতুমাতা ব্যারোর মতো অনেক চাষির জীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। চাষি হিসেবে ফাতুমাতা ব্যারো বলেন, আমরা আগে এখানে ধান চাষ করতাম, কিন্তু এখন ফলন কমে গেছে। ম্যানগ্রোভ যখন সতেজ ছিল, তখন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু সেগুলি এখন মরে যাবার ফলে ভালো ফসল হচ্ছে না।
গাম্বিয়ার জীব-বৈচিত্র্য ও পরিবেশ নিয়ে বেশি গবেষণা চালানো হয়নি। ফলে স্থানীয় ইকোসিস্টেমের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাবের পূর্বাভাস দেওয়া আরও কঠিন। সেই অবস্থা বদলাতে দশ জন তরুণ বিজ্ঞানী “জেমস” নামের উদ্যোগের প্রেরণা পেয়েছিলেন। গ্রেট ইনস্টিটিউটের বেটি জাহাতে বলেন, গাম্বিয়ার পরিবেশ মনিটরিং প্রণালীর সংক্ষিপ্ত নাম ‘জেমস’। এটি একটি গবেষণা প্রকল্প যেখানে আমরা গাম্বিয়া নদী বরাবর পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছি। ঋতু ও বছর অনুযায়ী তারতম্য আমরা বোঝার চেষ্টা করছি।
কিন্তু জলপথ প্রায় এক হাজার ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ হওয়ায় এই প্রতিষ্ঠানটিকে কমিউনিটি-ভিত্তিক গোষ্ঠী ও স্থানীয় মানুষের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যেমন সিডি ডার্বো পেশায় সাংবাদিক হলেও রাজধানী বানজুল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নাগরিক বিজ্ঞানী হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন। সিডি বলেন, সিটিজেন ডেটা কালেক্টর হিসেবে তথ্য সংগ্রহ করা এবং প্রতি সপ্তাহে তাদের কাছে সেগুলি পাঠানোই আমার দায়িত্ব। সেই সঙ্গে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকেও তথ্য সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দিতে হয়। আমি এই প্রকল্পে অংশ নিতে চেয়েছিলাম, কারণ, এই জায়গাটি দেখলে ইতোমধ্যে মৃত বলে মনে হবে।
নদীর নীচের অংশে সেই ব্যাপক ক্ষতির চিহ্ন দেখা যায়। প্রায় খালি প্রান্তরে ম্যানগ্রোভের ডগা মাথা উঁচু করে রয়েছে? ফলে উপকূল আর সুরক্ষিত নেই। নদীর জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে খেতে সেচের সুযোগও আর নেই। ম্যানগ্রোভ হারিয়ে যাবার ফলে মাছ ও পানির অন্যান্য প্রাণীর বাসভূমি ও বংশবৃদ্ধির জায়গাও লোপ পেয়েছে। মিঠা পানির মাছ নদীর উৎসের দিকে চলে গেছে। আন্তর্জাতিক এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবীদের সাহায্যে আনসুমানা ডার্বো ম্যানগ্রোভ অরণ্য পুনরুদ্ধারের আশা করছেন। তবে এবার ভিন্ন ও শক্তসমর্থ ম্যানগ্রোভ প্রজাতি কাজে লাগাতে চান তিনি।
তিনি বলেন, গ্রেট ইনস্টিটিউটের সঙ্গে মিলে সংগৃহীত তথ্যের মাধ্যমে পানির মধ্যে লবণের মাত্রা নির্ণয় করতে পারি। দ্বিতীয়ত, আমরা আমাদের ইকোসিস্টেমের মধ্যের ম্যানগ্রোভের প্রজাতি চিহ্নিত করতে পেরেছি। সেগুলি অনেক লবণ শুষে নেয়। আগে যখন কোনো গাছপালা ছিল না, তখন অনেক বেশি লবণ প্রবেশ করতো। এখন ম্যানগ্রোভ লবণ নিয়ন্ত্রণ ও শুষে নেবার ফলে ধানের খেতে লবণের মাত্রা অনেক কমে গেছে। ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে গাম্বিয়া নদী অববাহিকায় ইকোসিস্টেম সংরক্ষণের লক্ষ্যে দেড় লাখেরও বেশি ম্যানগ্রোভ চারা বপন করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও স্থানীয় উদ্যোগের মেলবন্ধনে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। সূত্র : ঢাকাট্রিবিউন বাংলা