এক মাসে ২৮ হাজার ডায়রিয়ার রোগী আইসিডিডিআর,বি’তে
শাহীন খন্দকার : রাজধানীর মহাখালী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআর,বি) প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে একশ’র ওপরে রোগী। প্রতি মিনিটেই রোগী আসছে আইসিডিডিআর,বি’র হাসপাতালে। হাসপাতালে চলতি বছর মার্চ মাসের ৩০ দিনে সর্বমোট ভর্তি রোগী ২৮ হাজার ৩৫০ জন ডায়রিয়া রোগী। গত ফেরুয়ারী মাসে এর সংখ্যা ছিলো ১০ হাজার ৩৪৪ জন।
এদিকে জানুয়ারী মাসে রোগী ভর্তি ছিলো ১৫ হাজার ৯০১ জন। আইসিডিডিআর,বি’র তথ্যের বরাতদিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সংক্রমিতদের বড় অংশ প্রাপ্ত বয়স্করা হলেও এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাও কম নয়।
এদিকে, ঢাকা মহানগর এলাকায় হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে আইসিডিডিআর,বি’। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩১৭ জন ডায়রিয়ার আক্রান্ত রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি হন। আইসিডিডিআর,বি’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালে শয্যা খালি নেই। হাসপাতালের বাইরে তাঁবুতেও রোগীদের জায়গা দেয়া যাচ্ছে না। এখন হাসপাতালের বাইরে বড় দুইটি অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এখন সেখানে প্রায় ১৫০০ রোগীর ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন। আইসিডিডিআর,বি’র এক চিকিৎসক জানান, ঘণ্টায় ৫৮-৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। আইসিডিডিআর,বি’ একটি সুত্রে জানাগেছে, সারা বছর দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ ডায়রিয়া রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে রোগীর সংখ্যা কিছু বাড়ে। সাধারণত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে শেষ সপ্তাহে রোগী চূড়ান্তভাবে বাড়ে। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার রোগী বেশি আসছে হাসপাতালটিতে এ তথ্য জানান সংশ্লিষ্টরা।
আইসিডিডিআর,বি’র এসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট ডা. শোয়েব বিন ইসলাম হঠাৎ ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে বলেন, গরমে ডায়রিয়ার জীবাণুটি অনুকূল পরিবেশ পায়। এ সময়ে তারা বেশিক্ষণ ফাইট করে বাঁচতে পারে। তাছাড়া গরমের সময়ে জীবাণুটি বেশি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, অনেক বেশি ছড়িয়ে থাকে। তাছাড়া মানুষ গরমের কারণে পিপাসার্ত হয় এবং পানি পানের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে না। এ দুটি কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে সাহায্য করে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মোহাম্মদপুর, শনিরআখড়া, উত্তরা থেকে বেশি রোগী আসছেন বলে এই চিকিৎসক উল্লেখ করেন। এবার ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের তুলনায় প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ পানি ও খাবারের বিকল্প নাই। সবচেয়ে ভালো করে তৈরি করা খাবার ও ফুটানো পানি খেতে হবে। পাশাপাশি বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
সরেজমিনে আইসিডিডিআরবিতে গিয়ে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়ার রোগী আসছে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে। ওই এলাকা থেকে আসা রিকশাচালকের স্ত্রী রাশেদা জানান তিন দিন ধরে হাসপাতালে আছেন মেয়েকে নিয়ে। তিনি জানান, যাত্রাবাড়ী এলাকায় ভাড়া করা একটি টিনশেড ঘরে তাঁর পরিবারসহ ১৫টি পরিবার বাস করে। বাড়ির মালিক ওয়াসার মূল সরবরাহ লাইন থেকে তাদের পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তবে ওয়াসার ওই পানিতে দুর্গন্ধ। সেই পানিই তাদের পান করতে হয়। গ্যাস না থাকায় পানি ফুটিয়ে পান করার সুযোগ নেই।
এদিকে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ‘বর্তমানে চারদিকে যে ডায়রিয়ার প্রকোপ চলছে তার সঙ্গে ওয়াসার পানির কোনো যোগসূত্র নেই। আইসিডিডিআরবি যেসব এলাকার কথা বলেছে আমরা সেসব এলাকার পানি পরীক্ষা করিয়েছি। ওয়াসার পানি সব সময়ের মতোই আছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭শে মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনলাইন বুলেটিনে মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, গ্রীষ্ম আসার আগেই দেশে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীতে বেড়েছে বেশি। ডায়রিয়া মোকাবিলায় বিশুদ্ধ পানি পান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলেন তিনি। বলেন, রোগের প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসা শুরু করা উচিত। ডায়রিয়াজনিত রোগ এখনো বিলুপ্ত হয়নি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ অন্যান্য লজিস্টিকের সরবরাহ রয়েছে বলেও জানান তিনি।