বৈদেশিক ঋণে সুদ-আসল পরিশোধে সফল বাংলাদেশ
অর্থনীতি ডেস্ক : বৈদেশিক ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে স্বাধীনতার পর থেকেই পারদর্শিতা দেখিয়ে আসছে বাংলাদেশ। শুধু ২০২০-২১ অর্থবছর ১৪১ দশমিক ৮৬ কোটি ডলার (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে যা ১২ হাজার ২শ কোটি টাকা প্রায়) আসল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে বৈদেশিক ঋণে সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ৪৯ দশমিক ৬১ কোটি ডলার (৪ হাজার ২৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা প্রায়)। সব মিলিয়ে যা ১৬ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ঋত পরিশোধের ধারায় উন্নয়ন সহযোগীরাও বাংলাদেশের প্রতি সব সময় ইতিবাচক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে এ তথ্য জানা যায়।
ইআরডি সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ১২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ছাড় হয়েছে ৭২ বিলিয়ন, পাইপলাইনে রয়েছে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (স্বায়ত্তশাসিত ছাড়া)।
নানা উন্নয়ন প্রকল্পে ঋত ও অনুদান দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। মোটা দাগে স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে মোট সাড়ে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় করেছে। এর মধ্যে নানা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ঋতছাড় করেছে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাকি ঋত এসেছে কমোডিটি এইড বাবদ। এরপর ১৮ বিলিয়ন ছাড় করেছে এডিবি। জাপানের ছাড় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সে তুলানায় ঋতছাড়ের ধারেকাছে নেই চীন। একই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৪ বিলিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র সাড়ে ৩ বিলিয়ন, রাশিয়া ৩ বিলিয়ন ডলার, কানাডা ও জার্মানি সমান ২ বিলিয়ন ডলার করে, ইউনিসেফ দেড় বিলিয়ন, ভারত ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন, নেদারল্যান্ডস ১ বিলিয়ন, ডেনমার্ক ১ বিলিয়ন, সৌদি ১ ও সুইডেন ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋতছাড় করেছে। এসব ঋণে উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়মিতভাবে সুদ ও আসল পরিশোধে সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ফলে উন্নয়ন সহযোগীরা সব সময় ঋত নিয়ে ঘুরছে বাংলাদেশের পেছনে।
কঠিন শর্তে বৈদেশিক ঋত নেওয়া ও প্রকল্পে দুর্নীতিসহ নানা কারণে সম্প্রতি ভেঙে পড়েছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে জনরোষ। এ পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের আশঙ্কা, বাংলাদেশের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে। তবে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগসহ (ইআরডি) সংশ্লিষ্টরা এ আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, যে কোনো প্রকল্পের আউটকাম তথা রিটার্নের বিষয়টি মাথায় রেখেই সহজ শর্তে ও দীর্ঘমেয়াদি ঋত নেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমানে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋত-জিডিপির অনুপাত ৬১ শতাংশেরও বেশি, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, কোনো একটি দেশের বৈদেশিক ঋত-জিডিপি অনুপাতের ২০ শতাংশকে আদর্শ ধরা হয়। সেদিক থেকে জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের বর্তমান ঋত ১৬ শতাংশ। ঋণের এ অনুপাতই বলছে, শ্রীলঙ্কার তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান অনেক বেশি দৃঢ় ও স্থিতিশীল।
ইআরডি জানায়, বৈদেশিক ঋত নিয়ে যাচ্ছেতাই খরচ করেনি বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীরা প্রকল্পসহ উন্নয়নকাজ বাবদ ৭২ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ঋতছাড় করেছে। এসব ঋণের বিপরীতে স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২০ দশমিক ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আসল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ।