সপ্তাহ শেষে আরেকটি আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা হাওরের দুঃখ কমছে না
শিমুল মাহমুদ : পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ ও সিলেটের হাওরাঞ্চলের কৃষক।
এরমধ্যে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে জানিয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও ভারতের মেঘালয় ও আসাম প্রদেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূইয়া বলেন, বৃষ্টিপাত বেশি হলে চলতি সপ্তাহের শেষে আরেকটি আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। নদনদী ও হাওরে পানির উচ্চতা এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে মাঝারি বৃষ্টিপাতেও সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
গত ১ এপ্রিল থেকে পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কায় এই চার জেলায় এরইমধ্যে ডুবেছে ৭ হাজার ৮৩ হেক্টর বোরো খেত। যার মধ্যে কেবলমাত্র সুনামগঞ্জ জেলাতেই ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর ফসলের খেত প্লাবিত হয়েছে। গত বছরের সরকার নির্ধারিত বিক্রয়মূল্যের হিসেবে ডুবে যাওয়া হাওরে ধানের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২৫ কোটি টাকার।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, সঠিক সময়ে শতভাগ বাধঁ নির্মাণ না করা, মাটির সঠিক ব্যবহার ও পরিমাণ মতো না দেওয়া, সেই সঙ্গে বাধেঁর মাটি পাশের জমি নেওয়ার ফলে সহসায় ভেঙ্গে পরে।
হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, দেরিতে কাজ শুরু করে শেষে তাড়াহুড়া করায় হাওরের প্রতিটি বাঁধ অত্যন্ত দুর্বল হয়েছে। বাঁধের কমপেকশন (মাটি শক্ত করে বসানোর প্রক্রিয়া) ঠিকভাবে শেষ না করেও বাঁধ নির্মাণ শতভাগ হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই অবস্থায় এসব বাঁধ বন্যার স্বাভাবিক ধাক্কাও সামলাতে না পেরে ফাটল দেখা দিচ্ছে এবং ভেঙে যাচ্ছে। তার উপর রয়েছে দুর্নীতি, অনিয়ম ও গাফিলতি।
পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, আমরা গত ১০ বছর ধরে দেখছি পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কাটা মার্চ মাসের শেষে কিংবা এপ্রিলে আসে। ২০১৭ সালেও এপ্রিলের শুরুতে এসেছিলো। বাধঁ গুলো ডুবে যাবে কারণ এর নকশা করা হয়েছে ডুবে যাওয়ার জন্য। এটি করা হয়েছিলো ১৯৭২, ১৯৭৩, ১৯৭৪ সনে। এর উচ্চতা আমি মনে করি ঠিক আছে। তবে এর সঠিকভাবে মেরামত করা হয়নি।
তিনি বলেন, হাওরের সংকট সমাধানে আমাদের দুটি পরিবর্তন আনতে হবে; একটি হলো বাধঁ মেরামতের কাজ আরো এগিয়ে নিয়ে আসা। দুই, এ কাজটি করবেন কৃষি মন্ত্রনালয়। একই সঙ্গে তারা কৃষকদের পরামর্শ দিবেন; যাতে মার্চের শেষ সপ্তাহের মধ্যে ধান কেটে নিয়ে আসতে পারে।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, কৃষি গবেষকরা ধানের সময়টা কমিয়ে নিয়ে আসতে পেরেছে ঠিকেই কিন্তু কৃষকের হাতে সে বীজ পৌছানোর কাজটি তারা করেনি। সেটি আগে ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী ফজলুর রশিদ বলেন, মাটি সংকটের কারণে আমরা হাওর এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন ও নৌ চলাচল সুবিধার্থে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আশা করছি এর পর আর এ সমস্যা থাকবে না।
তিনি বলেন, হাওরের ৯০ টা জায়গা চিন্তিত করে রেখেছি সেখানে বোরো ধানের সময় জিও ব্যাগ দিয়ে ভরাট করে রাখবো। আবার বর্ষার সময় এ জায়গাটা সড়িয়ে দিবো নৌ চলাচলের জন্য।
ফজলুর রশিদ বলেন, হাওরের আশেপাশে যে নদী গুলো আছে। বিশেষ করে ১৮টি নদীর সঙ্গে যুক্ত রেখে আমরা কাজ গুলো করছি। ফলে পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হবে না।