বাজেটে অত্যাবশকীয় পণ্যে আমদানি শুল্ক ও কর কমানোর পাশাপাশি মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার পরামর্শ নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে কষ্টে মধ্যবিত্তরাও : সিপিডি
সোহেল রহমান : নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি কম আয়ের মানুষসহ মধ্যবিত্তদের কষ্টকর অবস্থায় ফেলেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের এ উচ্চমূল্য চলতি অর্থবছরের বাকি সময়ে অব্যাহত থাকতে পারে এবং আগামী জুলাই মাস থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরের প্রথমদিকেও তা অব্যাহত থাকতে পারে।
এমতাবস্থায় বাজেটে নি¤œ আয়ের মানুষকে কীভাবে স্বস্তি দেয়া যায়, সেদিককে নজর দিতে হবে সরকারকে।
দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে আগামী বাজেটে সুনির্দিষ্ট কিছু অত্যাবশকীয় পণ্যের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক ও স্থানীয় পর্যায়ে অন্যান্য কর কমানোর পাশাপাশি মুদ্রার বিনিময় হার অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখার পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার পর পলিসি ডায়লগ’ (সিপিডি)।
আগামী বাজেটকে সামনে রেখে মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ : সিপিডি’র সুপারিশমালা’ শীর্ষক এক মিডিয়া ব্রিফিং-এ এসব সুপারিশ তুলে ধরেছে সংস্থাটি।
সিপিডি বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বাড়ার কারণে আগামী বাজেটে ভর্তুকির চাপ বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে ভোক্তা, কৃষক ও উৎপাদকের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি নীতি-নির্ধারকদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। ভর্তুকি প্রদানে ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদানে ভর্তুকি কমিয়ে আনা এবং সার ও খাদ্যে ভর্তুকি বাড়ানো যেতে পারে। অন্যদিকে প্রণোদনা প্রদানের খাতটি পুনর্গঠনের পাশাপাশি রপ্তানি ও বাজার বহুমুখীকরণে গুরুত্ব দেয়া এবং রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রণোদনা অব্যাহত রাখার সুপাশি করেছে সংস্থাটি।
সংস্থাটি বলেছে, আগামী বাজেটে সরকারকে কয়েকটি ক্ষেত্রে কঠির নীতি গ্রহণ করতে হতে পারে। বাজেট ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানো এবং সরকারি ব্যয়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে। তবে বাজেট ঘাটতির চেয়ে জনগণের কল্যাণ এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে সরকারকে অধিক মনোযোগ দিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো ও আন্ত:সংস্থা সমন্বয়ে এ খাতে সরকারের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। স্বল্প আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে আগামী অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা উচিত ।
সিপিডি বলেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলা, অর্থনীতির বিরূপ পরিস্থিতিতে প্রান্তিক ও নি¤œ আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ছোট ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা এবং কৃষি খাতকে গতিশীল করতে বাজেটে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে সংস্কার কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া, রাজস্ব আহরণ ঠিক রাখতে ধনীদের থেকে কর সংগ্রহ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও বাড়ানো এবং শিশুদের নিরাপত্তায় আরো মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতির হিসাবটি সঠিকভাবে করতে হবে। সঠিক তথ্যগুলো যাতে সবাই সহজে পেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। জিডিপি’র আকার বাড়লেও কর আদায় কমছে। এটা অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। কোভিডের আগে কর জিডিপি রেশিও ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই হলেও বর্তমানে তা ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়লেও আমদানি তার চেয়েও বেশি বাড়ছে। এতে করে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। বাজেটের মূল দর্শন হতে হবে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টির কিভাবে আয় বাড়ানো যায়।
তিনি আরও বলেন, বড়বড় মেগাপ্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ার কারণে দুর্নীতি ও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে ব্যয় বাড়লে ভবিষ্যতে এই প্রকল্পগুলো লাভজনক না-ও হতে পারে। কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে ড. ফাহমিদা বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করে উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদী হবে না। দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নে সবুজ অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।
সিপিডি‘র সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না Ñএটা নিয়ে আমরা গত কয়েকবছর ধরেই কথা বলছি। বাংলাদেশ থেকে যত অর্থ পাচার হয়েছে তার ৮০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়েছে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে। এবারের বাজেটে নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশি সর্তক থাকতে হবে। পাশাপাশি চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবাযনে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো বড় প্রকল্প নেয়া যাবে না।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আমরা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনীয় না, তবে শ্রীলঙ্কা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। নতুন ঋণগুলো আমরা কিন্তু বেশি সুদে কম সময়ের জন্য নিচ্ছি। শ্রীলঙ্কাও তাই করেছিল কিন্তু এতে করে তারা ধরা খেয়েছে। বড় প্রকল্পগুলো আমাদের নজর দিতে হবে। আমাদের আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এটার দিকে রজর দিতে হবে। আমাদের বাণিজ্যঘাটতি প্রথম ৮ মাসে ২২ বিলিয়ন ডলার। এটা বছর শেষে ৩০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নির্বাচনের বছর এসে যেন সরকার কর ও ঋণ খেলাপিদের কোনো ধরনের সুবিধা না দেয়।