বাজেটে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে : ড . দেবপ্রিয়
সোহেল রহমান : দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে বেঁচে থাকতে পারে সেজন্য আগামী বাজেটে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর সরকারকে বিশেষ জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে বাজেট হতে হবে অন্তর্ভূক্তিমূলক, যেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এর সুবিধা পেতে পারে। এ লক্ষ্যে প্রথাগত বাজেট তৈরির যে প্রক্রিয়া, সেটা থেকে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটানো প্রয়োজন।
রোববার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত আসন্ন বাজেট নিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে সংগঠনের আহবায়ক ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আগামী বাজেটে জনমানুষের প্রত্যাশাটা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড পরিস্থিতিতে সকলের কর্মহীনতা বেড়েছে, এর সাথে সাথে আয় কমেছে, মানুষ সঞ্চয় ভেঙেছে। সেজন্য বাজেটে প্রথমে জোর দিতে হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর। কী পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে, বেসরকারি খাত কী পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে ও কী পরিমাণ উদ্যোক্তা তৈরি হবে তা বাজেটে পরিষ্কারভাবে বলা থাকতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, অন্যদিকে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত, কারণ তাদের আয় সেই গতিতে বাড়েনি। মানুষকে নিঃস্ব হওয়া থেকে বাঁচাতে সরকার ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে খোলা বাজারে জিনিসপত্র বিক্রির আওতা বাড়াতে পারে এবং সামাজিক খাতে বরাদ্দ বাড়াতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা কোভিড উত্তর যে পুনরুজ্জীবনটা ২০২১ সালের শেষের দিকে দেখেছিলাম, ২০২২ সালের শুরু থেকে এটা ধাক্কা খেয়েছে। এটার সাথে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, সার ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য এবং ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে পৃথিবীর সার্বিক অস্থিরতা ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং এর সাথে পণ্য পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা ভীষণভাবে বিঘিœত হয়েছে।
সুতরাং সামনে যে নতুন চ্যালেঞ্জগুলো আছে সেগুলোকে মাথায় রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সেজন্য আমরা যেটা বলতে চাচ্ছি, অসাধারণ সময়ে সাধারণ বাজেট যেন না আসে। আমরা অসাধারণ সময়ে ব্যতিক্রমধর্মী বাজেট চাচ্ছি। যে বাজেটের একটি নীতি কাঠামো আগে প্রকাশ করা প্রয়োজন।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকার থেকে একাধিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে কোভিডের সময়কালে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গরিব ১ কোটি পরিবারকে টিসিবি’র মাধ্যমে খাদ্যপণ্য দেয়া হচ্ছে। একইভাবে খাদ্য মন্ত্রণালয় ৫০ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেবে। পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে সাহায্য অব্যাহত আছে, এটা সমন্বয় করে একটি অভিন্ন তথ্যভা-ারে মাধ্যমে তালিকা প্রকাশ করা হলে সরকার থেকে যে প্রণোদনা বরাদ্দ করেছে, কোন্ এলাকায় কোন্ জনপ্রতিনিধি কী পেয়েছেন, সেটার একটি তথ্য পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রণোদনা কী দেয়া হলো, আর কী পেল সেটার মধ্যে যদি কোনো পার্থক্য থাকে তাহলে সরকারের যে নীতি, যে আকাঙ্খা, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়ে যায়। যে যে এলাকায় জনপ্রতিনিধি আছেন, তারা কত টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন এবং কত টাকা খরচ করেছেন, সেগুলো জানার অধিকার রয়েছে। আমরা জানতে চাই, আসলেই পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ তার কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দিচ্ছে কিনা- এটা বাজেট আসার আগে পরিষ্কার করা দরকার।