গরিব দেশগুলোকে জরুরি খাদ্য সহায়তার আহ্বান
অর্থনীতি ডেস্ক : বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের আসন্ন বসন্তকালীন বৈঠককে সামনে রেখে শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছে এই চার আন্তর্জাতিক সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের সদর দপ্তরে ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল বসছে এই বৈঠক।=
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্ব এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। দুই বছরের করোনা মহামারির যেতে না যেতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের বাজারে আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে। এই আগুনে গরিব দেশগুলোর অসহায় দরিদ্র মানুষ চরম সংকটে পড়েছেন। নতুন করে ১ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। এদের পাশে সবাইকে সম্মিলিতভাবে দাঁড়াতে হবে।
প্রতি বছর এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠক। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত দুই বছর এ সভা ভার্চুয়ালি আয়োজন করা হয়। এবার সরাসরি বৈঠক বসছে।
বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের সদস্য দেশগুলোর অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ সরকারের উচ্চপর্যাযের প্রতিনিধিরা এই বৈঠকে যোগ দিয়ে থাকেন।
স্বাস্থ্যগত কারণে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবারের বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবিরের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নিচ্ছেন।
যৌথ বিবৃতিতে চার সংস্থার প্রধানরা গরিব দেশগুলোকে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে অনুদানের মাধ্যমে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপ (ডব্লিউবিজি), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) প্রধানরা আজ খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস, আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভা, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি-ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা-ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-আইওয়ালা এই বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিশ্ব চরম সংকটে কাঁপছে। চলমান কোভিড-১৯ মহামারি তৃতীয় বছরে প্রবেশ করেছে। এরমধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের পরিণতি বিশ্বকে এক ভয়াবহ কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর ফলে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য কিনতে পারছেন না গরিব দেশগুলোর অসহায় দরিদ্র মানুষ। দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন এই মানুষগুলো। আরও লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে এই কঠিন বাস্তব পরিস্থিতির কারণে বিশ্বব্যাপী আরও ১ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘খাদ্যের দাম গ্যাস, সারসহ খাদ্য উৎপাদনের অন্যান্য মূল উপাদানের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে। খাদ্যের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহের ধাক্কা ক্ষতিগ্রস্থ অনেক দেশে সামাজিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যারা ইতোমধ্যেই ভঙ্গুর বা সংঘাতে আক্রান্ত।’
‘আমরা জরুরি খাদ্য সরবরাহ, আর্থিক সহায়তা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মুক্ত বাণিজ্যের ব্যবস্থা থেকে সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে জরুরিভাবে দুর্বল দেশগুলোকে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই। আমরা আমাদের দক্ষতা এবং অর্থায়নকে একত্রিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, আমরা আমাদের নীতি এবং আর্থিক সহায়তাকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে দুর্বল দেশ এবং পরিবারগুলোকে সাহায্য করার পাশাপাশি প্রভাবিত দেশগুলোতে অভ্যন্তরীণ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
‘আমরা পেমেন্টের ভারসাম্যের চাপ কমাতে পারি এবং বাণিজ্যপ্রবাহ উন্মুক্ত রাখতে সব দেশের সাথে কাজ করতে পারি। এছাড়াও আমরা খাদ্যের দুর্বলতাগুলোর উপর আমাদের নজরদারি আরও জোরদার করব এবং আমাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের তুলনামূলক সুবিধার দ্বারা পরিচালিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে আমাদের বহুমুখী নীতি পরামর্শ দ্রুত প্রসারিত করব।’
‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুদানসহ জরুরি অর্থায়নের প্রয়োজনে সহায়তা করার জন্যও আহ্বান জানাই। এর মধ্যে তাৎক্ষণিক খাদ্য সরবরাহ, দরিদ্রদের চাহিদা পূরণের জন্য নিরাপত্তা জাল এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য অর্থায়ন অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আমরা সকল দেশকে বাণিজ্য উন্মুক্ত রাখতে এবং খাদ্য বা সারের উপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মতো বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থাগুলোকে এড়াতে অনুরোধ করছি।’
‘খাদ্য নিরাপত্তাহীন দেশগুলোর জন্য দ্রুত সমন্বিতভাবে সহায়তা প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। এই জরুরি সংকট মোকাবিলায় দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য আমরা আমাদের বহুপাক্ষিক এবং দ্বিপাক্ষিক অংশীদারদের সাথে একসাথে কাজ করতে প্রস্তুত আছি,’ বলা হয় বিবৃতিতে। সূত্র : নিউজবাংলা, জাগোনিউজ।