ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা রণক্ষেত্র
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর নিউমার্কেটের খাবারের দোকানের কর্মীর সঙ্গে ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিত-ার নিউ মার্কেটের দোকান কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। সোমবার মধ্যরাতে আড়াই ঘণ্টার সংঘাতের পর থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে সকালে আবার সংঘর্ষ চলে। পরে ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপে সংঘর্ষ কয়েক ঘন্টা বন্ধ থাকে। আবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে নতুন করে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। যদিও শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিকেলেই হল-ক্যাম্পাস বন্ধের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান করেছেন ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, যেকোনো মূল্যে হল-ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। মঙ্গলবার বিকেল সোয়া চারটায় ঢাকা কলেজের শহীদ আ. ন. ম নজিব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে সম্মিলিতভাবে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যানের কথা জানান।
এই সংঘর্ষের শুরু থেকে অন্তত ৪০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ২৯ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই ঘটনায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতির কথা বলেছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মানববন্ধন করতে রাস্তায় জড়ো হয়। এ সময় ব্যবসায়ীরাও বেরিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। কলেজের সামনের সড়কে লাঠি, রড হাতে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের ঢিল ছুড়তে দেখা যায়। অন্যদিকে নিউ মার্কেট ওভারব্রিজ এলাকায় অবস্থান নিয়ে থাকা দোকান কর্মচারীরা পাল্টা জবাব দেয়।
নিউ মার্কেট থানার পরিদর্শক অপারেশনস হালদার অজিত ঠাকুর বলেন, নিউ মার্কেটসহ আশেপাশের এলাকার সকল দোকান পাট বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান করছে। দোকান কর্মচারীরাও বিচ্ছিন্নভাবে আছে।
ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে টানা সংঘর্ষের জেরে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে, গরমের মধ্যে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন অনেকে।
মঙ্গলবার দুপুরে অ্যালিফেন্ট রোড, বাংলা মোটর, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নীলক্ষেত, আজিমপুর, মীরপুর রোডসহ আশ-পাশের এলাকায় তীব্র যানজটে থেমে থেমে চলতে দেখা যায় গণপরিবহনগুলোকে। তীব্র গরমের মধ্যে যানজটে বাসের ভেতরেই দীর্ঘক্ষণ থাকতে হয় দূরের গন্তব্যের যাত্রীদের। সোমবার নিউ মার্কেটে একটি খাবারের দোকানের কর্মীদের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিত-ার জের ধরে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত ১২টা থেকে শুরু করে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া চলে। শেষ পর্যন্ত রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সোমবার মধ্যরাতের ওই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে আবারও দুই পক্ষ সংঘাতে জড়ায়, যা বেলা আড়াইটার সময়ও চলছিল। দীর্ঘ সময় চলা সংঘর্ষে পুরো নিউ মার্কেট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পুরান ঢাকার সকাল এমনিতেই যানজট নাকাল থাকে। নিউ মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের কারণে অবস্থা আরও নাজুক। গণপরিবহন রুট বদলে মীরপুরের দিকে যাচ্ছে। ফলে নীলক্ষেত, এলিফেন্ট রোডসহ পুরো সড়কে চাপ পড়েছে বলে জানান সিএনজি চালকেরা।
দফায় দফায় সংঘর্ষের পর ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসগুলো আগামী ৫ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে দুপুরে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ টি এম মইনুল হোসেন স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা কলেজের সকল আবাসিক শিক্ষার্থীকে জানানো যাচ্ছে যে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অদ্য ১৯ এপ্রিল ২০২২ মঙ্গলবার থেকে ৫ মে ২০২২ তারিখ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকা কলেজের হলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হলো। অদ্য মঙ্গলবার বিকালের মধ্যে ছাত্রাবাস খালি করার নির্দেশ দেওয়া হল।
মঙ্গলবার চাঁদপুর সার্কিট হাউসে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, প্রায়ই দেখি আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারীদের সঙ্গে ছাত্রদের বাগবিত-া হয় এবং অনেক সময় তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
এটা খুবই দুঃখজনক। আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার বিষয়গুলো আমরা দেখছি।
তিনি বলেন, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০ এপ্রিল ঈদের ছুটিতে বন্ধ হলেও ঢাকা কলেজে যেহেতু ক্লাসের পরিবেশ নেই, তাই আজ থেকেই এই কলেজে ঈদের ছুটি শুরু হয়ে যাবে। আগামী ৫ মে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকা কলেজও খোলা হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সকাল থেকে থাকলে হয়তো পরিস্থিতি আরেকটু ভালো হতে পারত। তবে তারাও চেষ্টা করেছে, এখনো তারা চেষ্টা করছে থামানোর। আমি ছাত্র-ব্যবসায়ী সকল পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাই।
অন্যদিকে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আশা প্রকাশ করে বলেন, নিউ মার্কেট এলাকায় দোকান মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে দ্রুতই থামানো সম্ভব হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই এ ঘটনা কুল ডাউন হবে। যারা এ ঘটনার জন্য দায়ী তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে। নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, রাতের সংঘর্ষের সময় পুলিশ দ্রুত তৎপর হলেও সকালে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশকে ততটা উদ্যোগী দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। উত্তরে পুলিশ কমিশনার বলেন, পরিস্থিতি ঘটনাস্থলে অনেক জটিল আকার ধারণ করেছে। টেকনিক্যাল কারণেই পুলিশ ছাত্রদের প্রতি সফট আচরণ করছে। এখানে গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।