ব্রি২৮ জাতের ধান প্রতিস্থাপনের সুপারিশ ধান গবেষকদের
মতিনুজ্জামান মিটু : সর্বোত্তম ফলন দিতে সক্ষম এমন ধানের জাত সনাক্ত করেছে গবেষকরা। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ধানগবেষণা ইনস্টিটিউটে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) এবং ব্রি’র কর্মশালায় গবেষণালদ্ধ ফলাফল উপস্থাপনকালে এতথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষকরা নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি কৃষকের মাঠে ‘হড টু হেড অন-ফার্ম অ্যাডাপটিভ ট্রায়াল’ পরিচালনা করেছেন। এর মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদনশীলতা ও মুনাফা বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সর্বোত্তম ফলন দিতে সক্ষম এমন ধানের জাত সনাক্ত করা হয়েছে।
গবেষণা ফলাফলে আরও জানানো হয়, ধান বিজ্ঞানীরা নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি কৃষকের মাঠে সর্বোত্তম ফলন দিতে সক্ষম এমন অনেকগুলো ধানের জাত সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন জাতের ফলনের তুলনা ও নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমন এবং বোরো উভয় মৌসুমেই সেরা ফলন দেওয়া ধানের জাত সনাক্ত করেছেন তাঁরা। এজাতগুলো সারা দেশে সম্প্রসারণ করা গেলে চাষীদের উৎপাদন এবং মুনাফা উভয়ই বাড়বে।
২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন চাল উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। হেড টু হেড অন-ফার্মঅ্যাডাপটিভ ট্রায়ালে গবেষকরা দেখেছেন, বর্তমানে ব্রি ধান৮৮, ব্রি ধান৯৬ এবংব্রি ধান৯২ বোরো মৌসুমের সেরা ফলন দেওয়া ধানের জাত। রোপা আমান মৌসুমে, আইআর১৩ এফ৪৪১ এবং ব্রি ধান৭৯ আকস্মিক বন্যা-প্রবণ পরিবেশের কার্যকরি জাত। এছাড়াও, ভারতীয় ধানের জাত স্বর্ণার বিকল্প হিসেবে দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্রিধান৯৩, ব্রি ধান৯৪ এবং ব্রি ধান৯৫ সবচেয়ে জনপ্রিয় তবে মাঠ পর্যায়ে আমনের সর্বোচ্চ ফলন দেওয়া জাত হচ্ছে ব্রি ধান৮৭।
বিগত তিন বছর যাবত দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি হেড টু হেড অ্যাডাপটিভ ট্রায়াল (এইচএইচএটি) পরিচালনা করার পর গবেষকরা এধানের জাতগুলো চিহ্নিত করেছেন। তারা পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তসংগ্রহ ও পরিমাণগত ডেটা তৈরির মাধ্যমে জন প্রিয় পুরানো মেগা জাতের তুলনায় নতুন উদ্ভাবিত জাতের উৎপাদনশীলতা পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিপিজিবিপিজি টিট্রায়াল পরিচালনা করেন। এট্রায়ালে নতুন-উদ্ভাবিত উফশী জাত, আগে চাষকরা বেঞ্চ মার্ক জাত এবং কৃষক-পর্যায়ের স্থানীয় জাতগুগোর উৎপাদনশীলতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য এক মাঠে একত্রে চাষ করে ওই ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়াও গবেষণাটির মাধ্যমে বিভিন্ন সম্ভবনাময় জাত এবং জাতগুলোর বিভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা চিহ্নিত করা হয়েছে। এট্রায়ালে গবেষকরা কৃষক এবং কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীদের কাছ থেকে এসব জাত সম্পর্কে মতামত সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, এট্রায়াল কৃষকের মাঝে কৌতূহল, জ্ঞান এবং নতুন জাতের কার্যকরি চাহিদা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, গত বোরো মৌসুমে উফশী জাতের মধ্যে সবচেয়ে কম ফলন দিয়েছে ব্রি ধান২৮ এবং জাতটিতে বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের প্রকোপও ছিল বেশি। তাই এজাতটিকে অবিলম্বে প্রতিস্থাপন করা উচিত বলে মনে করেন ধান বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণ কর্মীরা। এছাড়াও, ব্রি ধান২৯ এবংব্রি ধান৮৯-এর ফলন প্রায় সমান হয়েছে। তবে, কিছুকিছু জায়গায় ব্রি ধান২৯ নেকব্লাস্ট রোগে সংক্রমিত হয়েছিল।
গবেষণাটির ব্রি অংশের ফলাফল উপস্থাপন করেন ড.মো. হুমায়ুন কবির, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রধান, ফলিত গবেষণা বিভাগ, ব্রি এবং ইরি অংশের ফলাফল উপস্থাপন করেন ইরি’র বিজ্ঞানী এবং সাউথএশিয়া– সিড সিস্টেম এন্ড প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট লিড-ড. স্বাতী নায়েক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। সভাপতিত্ব করেন ব্রির পরিচালক গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান, বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রিরপরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণপরিচর্যা) ড. মো. আবু বকর ছিদ্দিক, এবং ইরি-এর প্রজেক্ট লিড ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এছাড়া অনুষ্ঠানে ইরি, ব্রি, বিএডিসি, বিনা, কৃষিসম্প্রসারণঅধিদপ্তর, বীজপ্রত্যয়ন এজেন্সি, আরডিএ এবং অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।