যক্ষ্মার ৮০ ভাগই ফুসফুসে হয়ে থাকে
শাহীন খন্দকার : রাজধানীর শ্যামলী ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. প্রবীর কুমার দাস আরো বলেন, ফুসফুসে যক্ষ্মার পূর্ব লক্ষণ হাল্কা জ্বর ও কাশি হতে পারে। জ্বর, কাশির সঙ্গে কফ এবং মাঝে মাঝে রক্ত বের হওয়া ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি ফুসফুসের যক্ষার প্রধান উপসর্গ।
যক্ষা রোগীর কাশির সঙ্গে গলা দিয়ে থুতুর সঙ্গে রক্তও আসতে পারে।
যক্ষারোগীরা মুখ না ঢেকে কাশলে থুতুর ফোঁটা বাতাসে ছড়ায়। যক্ষা আলো-বাতাসহীন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাইকোব্যাক্টেরিয়াম অনেকক্ষণ বেঁচে থাকে।
তিনি আরো বলেন, সাধারণত তিন সপ্তাহের বেশি কাশি-জ্বর থাকলে অবশ্যই কফ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন তিনি। চিকিৎসকরা রোগীর কফ পরীক্ষা করে যক্ষা রোগের নির্ণয় করে থাকেন। যক্ষা দুই প্রকার এক জীবানু যুক্ত যক্ষা আর জীবানু মুক্ত যক্ষা। ফুসফুসের আক্রান্ত যক্ষা রোগটি হাচিকাশির মাধ্যমে ছড়ায়। তিনি বলেন, আমাদের এমন কোন অর্গান (অঙ্গ) নাই,যেখানে যক্ষ্মা হয়না। কারণ যক্ষ্মা হচ্ছে একটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণু দ্বারা সংক্রমণে হয়ে থাকে।
ডা. প্রবীর বলেন, ফুসফুসের যক্ষা ছোঁয়াচে। যক্ষারোগী থেকে সুস্থ মানুষের দেহে শ্বাস-প্রশ্বাসে, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে যক্ষ্মার জীবাণু খুব দ্রুত একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়াতে পারে। যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা শুরু থেকে ১৫ দিনের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা যায় তাহলে এক মাসের মধ্যে এই জীবাণু ছড়ানোর প্রকোপতা কমে যায়। জীবানু মুক্ত যক্ষা হচ্ছে কফ পরীক্ষা করার পরে,কফের মধ্যে জীবানু পাওয়া না গেলে এক্ষেত্রে রোগীটিকে আমরা ক্লিনিক্যাল অ্যাসেস করি এবং রেডিওলজিক্যাল ফাইন্ডিংস,তার সাইন্স সিম্টম অনুযায়ী পরীক্ষাগুলো অ্যাসেস করে ডায়াগনসিস করার আগ পর্যন্ত বলা যাবে না তাকে যক্ষা রোগী। এক্সেরে পরীক্ষায় দেখা যায় যক্ষার জীবানু রয়েছে, তার দীর্ঘ মেয়াদী জ্বর কাশি রয়েছে এবং তার ওজন কমে যাওয়া রোগীকে ইসমিয়ার নেগেটিভ হিসাবে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
ডা. প্রবীর বলেন, অতীতে যক্ষার ভালো চিকিৎসা ছিলো না। বর্তমানে যক্ষারোগের উন্নত চিকিৎসা ও ঔষধ বাংলাদেশ সরকার বিনা খরচে দিচ্ছে। যক্ষা রোগীরা নিয়ম করে চিকিৎসকের গাইডে ঔষধ খেলেই সুস্থ্য হচ্ছে। যক্ষারোগ মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে, ত্বক, অন্ত্র, লিভার, কিডনি, হাড়, চোখের গ্ল্যান্ডসহ দেহের যেকোনো স্থানে আক্রান্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, অতিতে যক্ষা হলে হতাশ হয়ে জীবন যাপন করত মানুষ। কারণ তখন যক্ষার কোন ঔষধ ছিল না। তাই মানুষ ভয় পেত। আজ আর সেই দিন নেই, যক্ষার ওষুধ নিয়মিত খাওয়ার পর যক্ষারোগী সম্পূর্ণরুপে ভালো হয় এখন। তিনি বলেন, সারাদেশে সরকারি ৪৪টি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক,৭টি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতল, সদর হাসপাতাল,জেনারেল হাসপাতাল,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ অর্ন্তবিভাগ ও বর্হিবিভাগ এবং এনজিও ক্লিনিক-এ যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
ডা. প্রবীর বলেন, ধূমপান,অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, মাদকাসক্তি, বার্ধক্য, অপুষ্টি ইত্যাদি ক্ষেত্রে যক্ষ্মার ঝুঁকি থাকে। তবে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় সফল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি এবং এটি বিশ্বে স্বীকৃত।