৩২ জেলার মানুষের ভোগান্তি ১২ কিলোমিটারে ঈদযাত্রায় চাপ বাড়বে কয়েকগুন
হাসিব খান: দেশে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক, আপাদত নেই কোনো বিধিনিষেধ। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও আশপাশের অঞ্চল থেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া শুরু করেছে অগণিত মানুষ। গত দুই ঈদে করোনার বিধিনিষেধে অনেকেই গ্রামে যেতে পারেনি। তবে এবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ কয়েকগুন বাড়বে। চাপ সামলাতে কতটুকু প্রস্তুত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে নানান শঙ্কার তথ্য জানা গেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিআরটি’র ধীরগতির নির্মাণকাজ, রোড ডিভাইডার না থাকা, মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে অবৈধ বাজার, অবাধে অটোরিকশা ও ইজিবাইকের চলাচল, সড়কে নির্মাণ সামগ্রীর স্তুপসহ বেশ কয়েকটি কারণে টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়কপথে উত্তবঙ্গের প্রায় ৩২টি জেলার মানুষ রাজধানী ঢাকা ছাড়তে ব্যবহার করেন এই সড়ক। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সরকারের মেগা প্রকল্প বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণকাজ চলছে ধীরগতিতে। এর মধ্যে গাজীপুরের টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। কোথাও উড়াল সেতুর স্ল্যাব বসানো, কোথাও সড়ক মেরামত আবার কোথাও চলছে উড়াল সেতুর পিলার নির্মাণ। সড়কের একদিকে চলছে উন্নয়নকাজ, অন্যদিকে সংকুচিত হয়ে যাওয়া সড়ক দিয়ে চলছে যানবাহন। এ কারণে সারাবছরই সড়কটিতে দিন-রাতের অধিকাংশ সময় দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও পরিবহনের চালকরা। ঈদের সময় যানজট বেড়ে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আসন্ন ঈদুল ফিতরেও ঈদযাত্রায় শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কটির ১২ কিলোমিটার অংশ।
তবে বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ বলছেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৭৩ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে রাস্তার দুই পাশে ড্রেন নির্মাণ সম্পন্ন হলেও উড়াল সড়ক ও ওভারপাস সড়কের লেনগুলোর নির্মাণকাজ চলছে। ঈদযাত্রার কথা মাথায় রেখে প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ঈদের আগে সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশে প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এ পথটুকু যেতে কখনো কখনো তিন থেকে চার ঘণ্টা সময়ও লেগে যাচ্ছে। তবে বর্তমানে টঙ্গী কলেজগেইট থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কটির প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে খানাখন্দ ও ভাঙাচোরা থাকলেও বাকি অংশে তা নেই। সড়কের ওপরে উড়াল সেতু এবং নিচে কার্পেটিং এখনো অনেক জায়গায় শেষ হয়নি। কোথাও কোথাও সাময়িক চলাচলের সুবিধার জন্য অস্থায়ী কার্পেটিং করা হচ্ছে। নির্মাণকাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের তিন লেনের কোথাও কোথাও এক লেনে পরিণত হয়েছে। এতে ওই পথে যানবাহন খুবই ধীর গতিতে চলছে। যার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।
রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর পার হলেই টঙ্গী। আর দুর্ভোগের শুরুটাও এখান থেকেই। টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামের সামনে উড়ালসড়কের কাজ চলছে। এর ফলে ওই জায়গায় সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ায় স্টেশন রোড পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। স্টেশন রোড এলাকায় মহাসড়কের মাঝখানের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট জায়গা বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড করা। এ কারণে সড়কটির দুই পাশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। স্টেশন রোড পেরিয়ে আরেকটু সামনে এগোলেই মিলগেইট এলাকা। এখানে আনুদিপ সিএনজি স্টেশনের সামনে মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে বিআরটির পিলার নির্মাণের জন্য বড় বড় দুইটি গর্ত খোড়া হয়েছে। এ কারণে ঢাকামুখি লেনে গাড়ি চলছে সংকুচিত এক লেনে। গর্তের পাশ দিয়ে কোনোমতে একটি গাড়ি যাতায়ত করতে পারছে। মিলগেইট এলাকা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কে কার্পেটিং হয়নি।
মিলগেইট পার হয়ে চেরাগআলী মার্কেটের আগ পর্যন্ত রাস্তায় নির্মাণ করা হচ্ছে উড়াল সেতুর পিলার। কলেজগেইট এলাকায় মহাসড়কের মাঝখানে চলছে উড়ালসেতুর গাড়ি উঠা-নামার লেন। এ কারণে মহাসড়কের দুই পাশের সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ায় ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। কলেজগেইট পেরিয়ে সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি কলেজের সামনে বিআরটি’র স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানেও মহাসড়কের দুই পাশের লেন সংকুচিত হওয়ায় যানচলাচলে ধীরগতি রয়েছে। গাজীপুরা এলাকায় সড়কের মধ্যে উড়ালসড়ক তৈরির ব্লক রেখে দেওয়ায় সংকুচিত সড়ক দিয়ে থেকে থেমে যানবাহন চলছে। এ পথ ধরে কুনিয়া বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, মালেকের বাড়ি এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের স্টেশন তৈরির কাজ চলমান। সেখানে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। ভোগড়া বাইপাস মোড়ে সড়কের দুই পাশ দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চললেও গাড়ির চাপের সঙ্গে বাড়ে যানজটও।
১২ কিমি সড়কে নেই রোড ডিভাইডার :
টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে বিআরটি’র কাজ চলমান। ইতোমধ্যে অধিকাংশ জায়গায় নিচের সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। চান্দনা চৌরাস্তা থেকে হোসেনমার্কেট পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশের লেন ছাড়াও বিআরটির আলাদা লেন তৈরি করা হয়েছে। তবে সড়কের কোথাও নেই রোড ডিভাইডার। কিছু কিছু স্থানে এক ফুট উঁচু রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা হলেও তাতে ঘটছে দুর্ঘটনা। কোথাও কোথাও শুধু বাঁশ দিয়ে ডিভাইডার দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ডিভাইডারে দেওয়া বাঁশ সড়কের মাঝখানে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। ডিভাইডার না থাকায় মহাসড়কে যত্রতত্র উল্টোপথে গাড়ি চলছে। দ্রুত গতির বাস-ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মুহূর্তের মধ্যে এক লেন থেকে অন্য লেনে চলে যাচ্ছে। এছাড়াও শাখা সড়ক থেকে অটোরিকশা ও ইজিবাইক মহাসড়কের একপাশ থেকে অন্যপাশে পারাপার করছে অবাধে। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী।
অবাধে অটোরিকশা ও ইজিবাইকের চলাচল :
মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গাজীপুরের কোথাও এটি মানা হচ্ছে না। নগরীর টঙ্গী, গাজীপুরা, বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, মালেকের বাড়ি ও ভোগড়া বাইপাস এলাকায় এসব যানবাহনের দৌরাত্ম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১২ কিলোমিটার মহাসড়কের যানজটের অন্যতম কারণও এসব ধীরগতির বাহন। ট্রাফিক পুলিশ মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করেও মহাসড়কে এসব ধীরগতির যান চলাচল বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ডাম্পিং করা হচ্ছে অটোরিকশা ও ইজিবাইক।
মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধ বাজার :
বিআরটি’র নির্মাণকাজের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সংকুচিত সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তার ওপর যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে বসানো অবৈধ বাজার। জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব বাজার বসিয়েছে। টঙ্গী বাজার মিতালি ফিলিং স্টেশন থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত মহাসড়কের ওপর বসানো হয়েছে শতাধিক দোকানপাট। চেরাগআলী এলাকায় সিটি করপোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনে মহাসড়কের ওপর ভ্যানগাড়ি বসিয়ে বসানো হয়েছে অবৈধ বাজার। গাজীপুর মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়েশা আক্তার আশা ও তার ছোট ভাই ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন এই ভ্যান বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে। দোকান প্রতি ৫০০ টাকা করে চাঁদা উঠানো হয় ইসমাইলের নেতৃত্বে। চাঁদার একটি অংশ চলে যায় প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার হাতে। এছাড়াও নগরীর বোর্ডবাজার, মালেকের বাড়ি, সাইনবোর্ড, ভোগড়া বাইপাস ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় মহাসড়কের পাশে দোকান বসিয়ে সড়ক সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। ১২ কিলোমিটার মহাসড়কের যানজটের অন্যতম কারণ এই অবৈধ বাজার।
সড়কে নির্মাণ সামগ্রীর স্তুপ :
চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় মহাসড়কের মাঝখানেই স্তুপ করে রাখা হয়েছে বিআরটির নির্মাণ সামগ্রী। মহাসড়কের তিন ভাগের এক ভাগ জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে কংক্রিটের তৈরি স্ল্যাব, লোহা, রোলার ও ভেকু। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে এসব নির্মাণ সামগ্রী মহাসড়ক থেকে সরিয়ে অন্যত্র রাখার জন্য একাধিকবার বলা হলেও তা মানেনি বিআরটি’র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক (সেতু বিভাগ) মহিরুল ইসলাম খান জানান, মহাসড়কের টঙ্গী অংশের নিচের সড়কের প্রায় ৯৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিছু অংশে এখনো ভাঙাচোরা রয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ২০ রমজানের পর থেকে ঈদের সময় মহাসড়কের নিচের সড়কে কোনো নির্মাণকাজ বা খোঁড়াখুঁড়ি হবে না। তবে উড়াল সড়ক ও পিলারের উপরে স্ল্যাব বসানেরা অন্যান্য কাজ চলবে। ঈদের আগেই সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের উপযোগী করে তোলা সম্ভব হবে।
ঈদযাত্রায় যাত্রীরা যেন দুর্ভোগে না পড়েন সে বিষয়টি মাথায় রেখে প্রকল্পের কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিভিন্ন টিম কয়েকবার মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেছে। ঈদযাত্রায় যাতে কোনোভাবেই ভোগান্তি না হয়, সেজন্য দিন-রাত কাজ করা হচ্ছে। রাস্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তবে ট্রাফিক ম্যানেজন্ট ঠিকভাবে করতে হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে মহাসড়কে অটোরিকশা-ইজিবাইক চলাচল বন্ধ, যত্রতত্র বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা বন্ধ করতে পারলে মহাসড়কে যানজটের সমস্যা হবে না আশাকরি।
মহিরুল ইসলাম খান আরও বলেন, মিলগেইট এলাকায় গর্ত করা হয়েছে পিলারের জন্য। দুই দিনের মধ্যে সেখানে পিলার নির্মাণ শেষ হবে। চেরাগআলি-কলেজ গেইট এলাকায় উড়াল সড়কের র্যামের জায়গার জন্য মাঝখানের জায়গাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে দুই পাশে তিন লেন রাস্তা করা হয়েছে। বাজার এলাকা হওয়ায় সেখানে যত্রতত্র বাস দাঁড়িয়ে এবং বজার বসিয়ে হয়তো সড়ক সংকুচিত করে রাখা হয়েছে।
ঈদের সময় যানজট পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমদ সরকার। তিনি বলেন, প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক দিয়ে কয়েক হাজার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও লরি চলাচল করে। এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় সাধারণ মানুষ গ্রামমুখী হবে। এজন্য রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়বে। আর গণপরিবহনেও মানুষের ব্যাপক চাপ পড়বে। রাস্তা ভালো না হলে যানজট থেকেই যাবে। যার কারণে এখন থেকেই যানজটের শঙ্কার মধ্যে আছি।
ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৬০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদের আগে এই সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। আমাদের ট্রাফিকের জনবল ৩০০। ঈদ উপলক্ষে পুলিশ লাইন্স থেকে অতিরিক্ত আরও ১০০ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। বর্তমানে ১২ ঘণ্টা ডিউটি শেষে ১২ ঘণ্টা বিশ্রাম দেওয়া হয় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের। তবে আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে ৮ ঘণ্টা ডিউটির পর ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে ফের ৮ ঘণ্টা ডিউটি করবে ট্রাফিক সদস্যরা। এ ছাড়া থানা পুলিশের সদস্যরাও ঈদের সময় মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, যে কোনো মেগা প্রজেক্টের কাজ চলমান থাকলে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। তবে আমরা বিআরটি’র কাজে দায়িত্বরতদের বলেছি সড়ক সংষ্কার করে দিতে। ইতোমধ্যে সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ অধিকাংশই শেষ হয়েছে। সড়কের মাঝখানে ফেলে রাখা নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়া, রোড ডিভাইডার তৈরি করে দেওয়া, ড্রেনের ওপর স্ল্যাব বসানোসহ বিভিন্ন বিষয় আমরা বিআরটি কর্মকর্তাদের বলেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছে ঈদের আগেই সেগুলো সমাধান করবে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, করোনায় ঘরমুখো মানুষের চাপ কম ছিলো। তবে এবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় মহাসড়কে যাত্রী ও গাড়ির চাপ বাড়বে। তবে রাস্তা ঠিক থাকলে আর বৃষ্টির পানি কোথাও না জমলে যান চলাচলে ধীরগতি থাকলেও যানজটের ভোগান্তি হবে না।
পোশাক কারখানার শ্রমিকদের একসঙ্গে ছুটি না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ট্রাফিকের এই কর্মকর্তা বলেন, গাজীপুরে প্রায় ২০ লাখ পোশাক শ্রমিক রয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পোশাক কারখানার মালিকদের অনুরোধ করেছি যেন শ্রমিকদের একসঙ্গে ছুটি না দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন শিফটে ছুটি দেয়। এছাড়াও কারখানার ভেতর থেকেই রিজার্ভ গাড়ির ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছি। এসব নির্দেশনা মানলে আশাকরি মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা হবে না।
মহাসড়কের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বাজারের বিষয়ে থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে জানিয়ে মামুন বলেন, থানা পুলিশ অবৈধ বাজারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে। অন্যদিকে মহাসড়কে অবৈধ অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দৌরাত্ম কমাতে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিদিনই ডাম্পিং করা হচ্ছে অটোরিকশা-ইজিবাইক। মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ পুলিশকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা।