দ্রুত নগরায়ণে জেলা ও মফস্বল শহরে বাড়ছে আবাসন ব্যবসার পরিসর
অর্থনীতি ডেস্ক : শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মফস্বল এলাকায় আবাসন ব্যবসায় গত ১০ বছরে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। যা প্রতি বছর ক্রমবর্ধমান। কিন্তু যথাযথ আবাসন আইন না থাকা এবং সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদে গৃহঋণ নেওয়ার জটিল পদ্ধতির কারণে অনেক বিনিয়োগকারী এই খাতে আসছেন না বলে জানান তারা। রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের মফস্বল শহরগুলোকে কেন্দ্র করে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার পরিসর প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এ খাতের বিকাশের অন্যতম কয়েকটি কারণ হলো মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়া, দ্রুত নগরায়ণ ও সর্বত্র বিদ্যুতায়ন।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মফস্বল এলাকায় আবাসন ব্যবসায় গত ১০ বছরে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। যা প্রতি বছর ক্রমবর্ধমান।
কিন্তু যথাযথ আবাসন আইন না থাকা এবং সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদে গৃহঋণ নেওয়ার জটিল পদ্ধতির কারণে অনেক বিনিয়োগকারী এই খাতে আসছেন না বলে জানান তারা।
এসব বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে সরকার তা বাস্তবায়ন করলে মফস্বল এলাকায় আবাসন ব্যবসায় বিনিয়োগ আরো বাড়বে। একইসাথে জনগণের জন্য আবাসন নিশ্চিতের ব্যবস্থাও সহজ হবে বলে মনে করেন তারা। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অভ প্ল্যানার্সের (বিআইপি) তথ্যমতে, গত ১০ বছরে আবাসন খাতে প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। যার প্রায় ৩০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে মফস্বল এলাকায়।
বিআইপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘শুধু ২০২১ সালেই দেশের আবাসন খাতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। যার মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের শহরগুলোতে। অধ্যাপক আদিল জানান, সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে ঢাকা বিভাগে।
গত দশ বছরে মুন্সীগঞ্জ, নারাণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ ও আশুলিয়া এলাকায় প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিভাগের মফস্বল শহরগুলোতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা, সিলেট বিভাগে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা, রাজশাহী বিভাগে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা, ময়মনসিংহ বিভাগে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা, খুলনা বিভাগে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা, বরিশাল বিভাগে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা এবং রংপুর বিভাগে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে।’
২০২১ সালে প্রায় সাড়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা, ২০২০ সালে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা, ২০১৯ সালেও প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা, ২০১৮সালে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা, ২০১৭ সালে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৬ সালে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা, ২০১৫ সালে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা, ২০১৪ সালে প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৩ সালে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১২ সালে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, রাজধানীর মতো সব নাগরিক সুবিধাসহ উন্নত জীবনযাপনের জন্য মানুষ এসব আবাসন প্রকল্পে প্লট ও ফ্ল্যাট কিনছে।
গত ১০ বছরে বগুড়াকে শহরকে কেন্দ্র করে আবাসন ব্যবসায় বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
বগুড়ার অদূরে মাটিডালি এলকায় প্রায় ১০ একর জমির ওপর কমফোর্ট হাউজিং নামের একটি আবাসন কোম্পানি ২০ বছর আগে প্লট ব্যবসা শুরু করে।
ওই প্রকল্পে ২০১৮ সালে একটি প্লট কেনেন অগ্রণী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল অফিসার আকরাম হোসেন।
তিনি বলেন, আমি আর আমার স্ত্রীর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বগুড়ায় ওই প্লটটি কিনে একটি তিনতলা বাড়ি করে সেখানে বসবাস করছি। রাজধানীতে দীর্ঘদিন অবস্থান করায় একধরনের একঘেয়েমি চলে এসেছে। বাকি জীবন নিজ জেলায় কাটাব। এখানে সব রকম সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
কমফোর্ট হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জুলকার আলী খান বলেন, ১৯৯৯ সালে বগুড়া শহর ও এর আশপাশের এলাকায় আবাসন ব্যবসার শুরু। নাগরিক জীবনের সব সুযোগ-সুবিধা থাকায় এই জেলার অনেক বিত্তশালী বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠান থেকে প্লট ও ফ্ল্যাট কিনছে।
বগুড়া রিয়েল এস্টেট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাইরুল জানান, তার প্রতিষ্ঠান গত দশ বছরে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে আবাসন ব্যবসায়। গত ১০ বছরে বগুড়া শহর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৬০টি আবাসন কোম্পানি প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে।
সিলেট অ্যাপার্টমেন্ট অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট গ্রুপের সভাপতি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, সিলেট এলাকার একটি বড় সংখ্যক লোকজন দেশের বাইরে থাকে। বিদেশে অবস্থান করা প্রবাসীদের মধ্যে ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া-প্রবাসী বেশী। তারা মূলত শহরের কাছাকাছি নিরিবিলি পরিবেশে বাবা-মা বা নিকটাত্মীয়দের জন্য আবাসন করতে বেশ উৎসাহী। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখন সিলেট বিভাগে প্রায় ৫০০টি আবাসন কোম্পানি রয়েছে, যারা ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও ফ্লাট ব্যবসার সাথে জড়িত।
রাজশাহীর আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান কাজী বলেন, রাজশাহীর সাথে সারা দেশের যোগাযোগ ভালো। একটি বিমানবন্দরও রয়েছে।
তিনি বলেন, এসব এলাকায় গ্রামাঞ্চলের লোকজন যাদের একটু ভালো টাকা পয়সা আছে বা সরকারি চাকরি করেন, তারাই এসব আবাসন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্লট ও ফ্ল্যাট কিনছেন।
খাত সংশ্লিষ্টরা বছেন, দেশের সাগর ও পাহাড়ি এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশে প্লট ও ফ্ল্যাটের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।
দেশের আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন, রিহ্যাব চট্টগ্রাম কমিটির সভাপতি আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ায় এর পার্র্শ্বতী জেলা ও উপজেলাগুলোতে মানসম্মত আবাসনের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও পাহাড়ি এলাকায় প্রকৃতিক পরিবেশে বসবাসেরও একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে।’
আবার বঙ্গোপসাগরের পাশে পাহাড় ও সমুদ্রের আবহাওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন জীবন যাপনের জন্য অনেকই ঝুঁকছেন বলে জানান কক্সবাজার রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাইনুল হোসাইন মইন।
এছাড়াও বরিশাল বিভাগের কুয়াকাটা সী-বীচ এলাকা কেন্দ্র করে ৩০টি আবাসন প্রতিষ্ঠান গত দশ বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে জানান কুয়াকাটা আবাসন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইমরুল হাসান ইমন।
নির্মাণ সামগ্রীর বাজারদর বৃদ্ধির ধাক্কা
গত কয়েক মাসের অস্বাভাবিকহারে গৃহ নির্মাণ সামগ্রীর বাজাদর কারণে আটকে গেছে মফস্বল এলাকার বেশিরভাগ প্রকল্পের নির্মাণকাজ। বিশেষ করে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রড, সিমেন্ট, ইট, বালু, পাথরসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দাম ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ হারে ।
সিলেট অ্যাপার্টমেন্ট অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট গ্রুপের সভাপতি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, রডের বাজারদর এখন টনপ্রতি প্রায় ৯৫-৯৭ হাজার টাকা। এছাড়াও সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর বাজারদর বেড়ে যাওয়ায় সিলেটের আবাসন প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় বন্ধ রয়েছে। মাত্র দু-চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে, যারা গত ২৪ ফেব্রুয়ারির আগে এসব সামগ্রী কিনে স্টক করে রেখেছিল।
কক্সবাজার রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাইনুল হোসাইন মইন বলেন, কক্সবাজার এলাকায় গত মার্চ মাসের শুরুর দিকে ফ্ল্যাটের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রীর বাজারদর বৃদ্ধি পাওয়ায়। এখানে এলাকাভেদে ফ্ল্যাটের বর্গফুট দাম ছিল আগে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। এখন প্রতি বর্গফুটে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রম এলাকা ছাড়া রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে গত তে দাম ছিল ২ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা প্রতি বর্গফুট। এসব এলাকায় গত মার্চে ৭০০ থেকে ১,২০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি বর্গফুটে দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানান স্থানীয় আবাসন ব্যবসায়ীরা।
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল জানান, সিলেট এলাকায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ফ্ল্যাটের দাম একটু বেশি। এই এলাকার ফ্ল্যাট ক্রেতারা বেশিরভাগই প্রবাসী হওয়ায় মানসম্মত ফ্ল্যাট তৈরি করতে হয়। ‘ফলে এখানে গত বছরের মার্চের আগে ফ্ল্যাটের দাম এলাকাভেদে ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল প্রতি বর্গফুটের দাম। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে এসব এলাকায় প্রতি বর্গফুটে দাম বেড়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা।
দেশের আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, এখন দেশে ছোট-বড় প্রায় ৪ হাজার আবাসন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের মধ্যে রিহ্যাবের সদস্য প্রায় ১ হাজার ২০০।
আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, আবাসন ব্যবসা করার জন্য আবাসন নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের রিহ্যাব সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু নিজস্ব এলাকার সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কাছে থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে তারা ব্যবসা করছে। ফলে কোনো প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করলেও বেন্দ্রীয়ভাবে রিহ্যাব তাদের বিরুদ্ধে কোনো উদ্যোগ নিতে পারে না।
রাজশাহীর আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন (রেডা) সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান কাজী বলেন, শুধু আবান ব্যবসায়ীরাই নয়, ব্যক্তিগতভাবে যারা বাড়ি নির্মাণ করছেন, তারাগ গত দুইমাস ধরে নির্মানকাজ বন্ধ রেখেছেন মফস্বল এলাকায়।
উদ্যোক্তারা বলছেন, সহজ ব্যাংকঋণ ও সরকারি নীতি সহায়তা ক্রমবর্ধমান আবাসন খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে।
রিহ্যাব পরিচালক নাইমুল হাসান বলেন ‘আমরা ব্যাংকঋণ পাচ্ছি না। ৯ শতাংশ সুদ বলা হলেও গৃহ ঋণের সুদ হার এখন ১৪ শতাংশ পড়ে। এরপরও ঋণ দেওয়াতে অনেক গড়িমসি। অথচ বিদেশে আবাসন খাতে ব্যাংকঋনের সুদ ৪ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ব্যাংকঋণ সহজ করলে শহর ও মফস্বলে এই ব্যবসার পরিধি আরো বাড়ানো সম্ভব।
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মুনসুর বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পর আবাসন শিল্পের অবস্থান। তবে গার্মেন্টস শিল্পের চাইতে অনেকগুণ বেশি বিনিয়োগ রয়েছে আবাসন খাতে। অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে এ খাতের বিনিয়োগ দেশে সর্বোচ্চ।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার একমাত্র খাত আবাসন শিল্প। যত বেশি আবাসন প্রকল্প বাজারে আসে, দেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি তত বাড়তে থাকে এবং দেশের সাধারণ মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি গৃহায়ণ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান, যেমন রড, সিমেন্ট, টাইলস, পেইন্টস, অ্যালুমিনিয়াম, ফার্নিচার, ইলেকট্রিক, ইট, বালি, পাথরসহ ৩০০ লিংকেজ শিল্প গড়ে তুলে সরকারের রাজস্ব আয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
তিনি জানান, দেশে আবাসন শিল্প যে পরিমাণ প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রয় করে, তার তিন ভাগের এক ভাগের ক্রেতা প্রবাসী। প্রতি বছর প্লট ও ফ্ল্যাট মিলে ৮ হাজার কোটি থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের আবাসন শিল্পের বিকাশ হচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ভূমি উন্নয়ন নীতিমালা, আবাসন নীতিমভলা, রিয়েল এস্টেট নীতিমালাসহ আবাসন সংক্রান্ত বেশ কিছু আইন ও নীতিমালা রয়েছে। তবে আইনগুলোতে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে।
যেমন কোনো ব্যক্তি প্লট কেনার পর প্রতারিত হলে সরকারি আদালতে যাওয়ার বিধান রয়েছে, কিন্তু এ-সংক্রান্ত কোনো সরকারি রেগুলেটরি বডি নেই, বলেন তিনি।
আবার ফ্লাট কেনার পর প্রতারিত হলে ক্রেতা মামলা করতে পারে না। অভিযোগ করতে হয় সালিশি আদালতে। সেখানে আইনি প্রক্রিয়া বেশ জটিল। সরাসরি মামলা করার বিধান করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইকবাল হাবিব বলেন, কৃষিজমি নষ্ট করে যেন কোনো আবাসন প্রকল্প গড়ে না ওঠে, তার জন্য আইন থাকলেও সেটির বাস্তবায়ন নেই।
তিনি আরও বলেন, প্লট বা প্লট কেনার পর নিবন্ধন করতে ফি-র পরিমাণ অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি। এটি কমিয়ে আনতে হবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার বলেন, নগরায়ণের ফলে মফস্বলে আবাসন ব্যবসা বেশ চাঙা হয়ে উঠছে। সরকারও মফস্বলে এই ব্যবসার অগ্রগতির জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় অবস্থিত আবাসন কোম্পানিগুলো যাতে ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারে সেজন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি মনিটরিং টিম আছে। এছাড়াও কোনো গ্রাহক যাতে করে প্রতারিত না হয়, সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
মফস্বল এলাকায় যেভাবে আবাসন ব্যবসা বাড়ছে, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো চাঙা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সূত্র : টিবিএস বাংলা অনলাইন