সরকারের বেঁধে দেওয়া ভোজ্যতেলের দাম মানছেন না ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম
মাসুদ মিয়া : দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। ফলে সাধারণ মানুষের আয় না বাড়লেও ব্যয় বেড়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে খাদ্যসামগ্রীর দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। মানুষের জীবনকে আরও কষ্টকর করে তুলছে। চাল, ডাল, তেল মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষ।
গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোজ্যতেলের দাম বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। সরকারের বেঁধে দেওয়া ভোজ্যতেলের দাম মানছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। যে যার মতো দাম নিচ্ছে। সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। দ্রুত ভোজ্যতেলের দাম কমানোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছেন ক্রেতারা। ভ্যাট প্রত্যাহারের পরও বাজারে কাটেনি তেল সংকট।
রাজধানী রায়সাহেব এলাকার বাসিন্দা জাকির বলেন, দ্রব্যমূল্য প্রতিনিয়ত অকল্পনীয়ভাবে বেড়েই চলেছে। মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত মধ্যবিত্ত মানুষেরা সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে। যেভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও ইনকাম বাড়তেছে না। এদিকে চালের দাম কমছে না প্রতিকেজি নাজিরশাইল, মিনিকেট ও বাশমতি নামের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬৫-৭০ টাকায়। এছাড়া মোটা মানের স্বর্ণা ও চায়না ইরি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ এবং মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ৩৮ টাকা বাড়ানোর পরও সংকট কাটেনি। বাজারের বেশিরভাগ দোকানেই তেল পাওয়া যাচ্ছে না। দু-একটি দোকানে ৫ লিটারের বোতলজাত তেল পাওয়া গেলেও ইচ্ছেমতো দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়। এক লিটার বোতল জাত সয়াবিন তেল নিচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকা। ৫ লিটারে পড়ছে হাজার টাকারও বেশি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করার ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীরা। এই দাম শনিবার থেকে কার্যকর হবে বলে জানান তারা। নতুন দাম অনুযায়ী ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হবে ৯৮৫ টাকায়। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ১ লিটার ১৮০ টাকা ও পাম তেল ১ লিটার বিক্রি হবে ১৭২ টাকায়।
রায়সাহেব বাজারের আদর স্টোর এর ব্যবসায়ী বলেন, ১ লিটার সয়াবিন ২০০ টাকা ৫ লিটার হাজার টাকা বিক্রয় করছি। এখনো নতুন দামের নির্ধারণ তেল হাতে পাইনি। ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকে তেলের গাড়ি আসে না। ৩-৪ দিন পর তেলের সরবরাহ বাড়বে শুনছি। পাশের দোকান নাসির স্টোর ৫ লিটার বিক্রয় করছেন হাজার টাকা পামওয়েল কেজি বিক্রয় করছেন ১৯০ টাকা কেজি। আবার কেউ কেউ পামওয়েল ২০০ টাকার বেশি বিক্রয় করছে।
এদিকে রায়সাবে বাজার থেকে ভোজ্যতেল কিনছিলেন নাসিরউদ্দিন সরদার লেনের বাসিন্দা খালেদা আক্তার বলেন, দফায় দফায় বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। তেলের সরকারির নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে- এমন অভিযোগ করে বলেন।
গত দুই বছর আগে দুই লিটার তেল কিনতাম ২০০ টাকা দিয়ে এখন সেখাতে কিনতে হচ্ছে ৪০০ টাকা। দুই বছর ব্যবধানে বেড়েছে ২০০ টাকা। পাশাপাশি চাল ডাল চিনি আটাসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দামও বাড়তি।
তাই সরকারের নিত্যপন্যের দিকে নজর দিতে হবে অসাধুব্যবসায়ীরা দাম না বাড়াতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাচঁ ভাইঘাটলেন মুদি পণ্যের ব্যবসায়ী নাজমুল বলেন, পাইকারি বাজার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই। আর এ কারণে খুচরায়ও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। কেজিতে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা বেড়ে পেঁয়াজের দাম ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায় উঠেছে।
এদিকে গত সপ্তাহে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যবসায়ী বাছাই করা পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা বিক্রি করছেন। পেঁয়াজের দামের বিষয়ে কলতাবাজারের ব্যবসায়ী সাদ্দাম বলেন, দুই সপ্তাহ আগে পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকা ছিল। এখন বেড়ে পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকায়।
এদিকে হঠাৎ তেলের নতুন দাম শুনে আবাক হয়েছেন সাইফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা। এক লিটারে ৪০ টাকা কিভাবে বাড়ে। আমরা তো আর বিশ্ববাজার বুঝি না। পরিবারের আয় রোজগার বাড়ে নাই। এমনিতে সবকিছুর দাম বাড়তি গত কয়েক মাস। এর মধ্যে তেলের দামের এই অবস্থা।
তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের মূল্য বেড়ে গেছে। সে কারনে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তারা জানান। এ যেন সেরের ওপর সোয়া সের অবস্থা।
ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে এমনিতেই নাকানিচুবানি খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতারা। তারা অভিযোগ করে বলেন, লকডাউনের সময় যখন দেশের খাদ্যদ্রব্যের সংকট ছিল তখনই মোটা মসুরের ডাল ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। সেটিই এখন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।