বাংলাদেশের দায়-দেনা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম : ড. দেবপ্রিয়
সোহেল রহমান : বাংলাদেশের দায়-দেনা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। তবে ২০১৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশে দেশি ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করাটা অযৌক্তিক। এমন পরিস্থিতির হওয়ার কারণ নেই। এক একটি দেশ একেক রকম বিকশিত হয়। একটার সঙ্গে অন্যটি মেলানো যৌক্তিক নয়।
সোমবার বাংলাদেশের সরকারি দায়-দেনার পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, আইএমএফ-এর হিসাব মতে, ২০২০ সাল পর্যন্ত সরকারের দায়-দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে জিডিপি’র ৩৪.০৭ শতাংশ। আর ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের দায়-দেনা ১৩১.১৪ বিলিয়ন। গত তিন বছরে গড় হিসাবে দায়-দেনা প্রায় সাড়ে ১৬ বিলিয়ন করে বেড়ে গেছে। সার্বিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা গেছে, ২০০২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত দায়-দেনা বৃদ্ধি হার ছিল ৪৪.১ শতাংশ। কিন্তু ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এটা বেড়ে প্রায় ৬৭ শতাংশ হয়েছে। আমাদের দায়-দেনা পরিস্থিতি চলমান দশকে দেড়গুণ বেড়ে গেছে। আমরা প্রতিবছর ১০ বিলিয়ন ডলার করে দায়- দেনা বাড়াচ্ছি। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক দায়-দেনা ১৬.৬ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ এবং ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪.৭ থেকে ১৬.৯ শতাংশ বেড়েছে। বৈদেশিক ঋণ বহুপাক্ষিকের তুলনায় দ্বি-পাক্ষিকভাবে বাড়ছে। এর সঙ্গে চীন, রাশিয়া ও ভারতের সম্পৃক্ততা বাড়ছে।
ড. দেবপ্রিয় জানান, বর্তমানে দেশে বৈদেশিক দায়-দেনার পরিমাণ ৬০.১৫ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে মাথাপিছু ঋণ ৪৩২ ডলার। প্রতিবছর দেনা পরিশোধে ০.৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে দুর্বলতা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ঋণ। যেটা দায়-দেনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয় না। অভ্যন্তরীণ দেনা বৃদ্ধির হার খুবই বেশি। অভ্যন্তরীণ দায়-দেনা ৬৯ বিলিয়ন ডলার। গত এক দশকে অভ্যন্তরীণ দেনা বৃদ্ধির হার প্রায় ৫৪ শতাংশ। ২০১৩ সালের পরে এই বৃদ্ধি হার ১৫ থেকে ১৯ শতাংশ হারে বাড়ছে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকারি দায়-দেনার সঙ্গে নির্বাচনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। ব্যক্তিখাত বিদেশ থেকে ঋণ নিয়েছে ১৮.৭ বিলিয়ন ডলার। এটা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা জিডিপি’র ৫ শতাংশ। দীর্ঘমেয়াদী ঋণের তুলনায় স্বল্পমেয়াদী ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এর সঙ্গে বাণিজ্যিক ঋণ বাড়ছে। তারা যদি ঠিকমতো ঋণ পরিশোধ না করে তাহলে দেশের জন্য অশনি সংকেত হতে পারে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ও পরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের পরিমাণ বেড়ে যায়। গ্লোবাল ইন্ট্রিগ্রিটির তথ্য সেটাই বলছে। গণতান্ত্রিক অস্তিতিশীলতা ও আস্থার সংকট দেখা দিলে এ ধরনের প্রবণতা বেড়ে যায়।