শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের পদত্যাগ
অর্থনীতি ডেস্ক : শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করেছেন। সোমবার তাঁর মুখপাত্র রোহান ওয়েলিউইটা এ তথ্য জানান। আজ মাহিন্দার সমর্থক ও সরকারবিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর তিনি পদত্যাগ করেন। ওই সংঘর্ষে ৭৮ জন আহত হন। ৭৬ বছর বয়সী মাহিন্দা তাঁর পদত্যাগপত্র ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের কাছে পাঠান। মুখপাত্র রোহান বলেন, ‘নতুন জোট সরকার’ গঠনের পথ পরিষ্কার করতে তিনি (মাহিন্দা) পদত্যাগ করেছেন। অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী করে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে দেশটিতে বেশ কিছুদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে সংঘর্ষের পর কারফিউ জারি করে পুলিশ।
সরকারি কর্মকর্তাদের সূত্র জানায়, কলম্বোর কেন্দ্রস্থলে সহিংসতায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তবে হাসপাতাল সূত্র জানায় এরই মধ্যে আহত হয়ে হাসপাতালে ৭৮জন এসেছে।
গত ৯ মে থেকে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের কার্যালয়ের বাইরে বিরোধীরা ক্যাম্প করে থাকছিল। তাদের ওপর রাজাপক্ষের অনুগত সশস্ত্র বাহিনী লাঠি নিয়ে চড়াও হয়।
যেসব সরকার সমর্থক পুলিশের বেধে দেওয়া সীমারেখা অতিক্রম করে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের তাঁবু এবং অন্যান্য কাঠামো ভেঙে দিয়েছে তাদের ওপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ছুড়েছে ।
তখন মাহিন্দা রাজাপক্ষে সাধারণ জনগণকে সংযত আচরণ করতে অনুরোধ জানিয়ে বলেছিলেন, মনে রাখতে হবে সহিংসতা কেবল সহিংসতার জন্ম দেয়। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘অর্থনৈতিক এ সংকটের সমাধান অর্থনৈতিকভাবে করতে হবে। আর এটি করতে প্রশাসন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ গত শুক্রবার দেশটির সরকার সেনাবাহিনীকে ধরপাকড়ের ক্ষমতা দিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা ‘উসকানিমূলক এবং হুমকিস্বরূপ’ আচরণ করছে এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবা খাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
ট্রেড ইউনিয়ন নেতা রবি কুমুদেশ বলেন, ১৭ মে পার্লামেন্টে পরবর্তী অধিবেশন শুরু হলে তারা জাতীয় সংসদে ঝড় তোলার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রের কর্মীদের একত্র করবে। এক বিবৃতিতে কুমুদেশ বলেন, ‘আমরা যা চাই তা হলো প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের বিদায়।’
৩১ মার্চ তাঁর ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসভবনে কয়েক হাজার ব্যক্তি হামলা চালানোর চেষ্টা করলে এর পর থেকে প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, রাষ্ট্রপতি এই সংকটের মধ্যে দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনার স্বার্থে একটি ঐক্য সরকার গঠনের পথ তৈরির প্রয়োজনে তাঁর ভাই মাহিন্দাকে সরে দাঁড়াতে বলতে পারেন। কিন্তু এরই মধ্যে দেশটির সবচেয়ে বড় বিরোধী দল জানিয়ে দিয়েছে রাজাপক্ষের বংশের কারও দ্বারা পরিচালিত সরকারে যোগ দেবে না।
ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশঙ্কাজনক কম। এ জন্য জ্বালানিসহ অন্যান্য পণ্য আমদানির মূল্য পরিশোধ করতে পারছেন না তাঁরা। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক পণ্যের আমদানি বন্ধ করতে হয়েছে দেশটিকে। গত মাসে এ দেশটি জানিয়েছিল, তারা ৫ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি ঋণ খেলাপি।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এমন সংকটের মুখে আগে কখনো পড়েনি শ্রীলঙ্কা। জনগণ এই সংকটের জন্য সরকারের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছে। সূত্র : এনটিভি অনলাইন, নিউজবাংলা।