
বিশ্বের ক্রেতাদের নজর এখন বাংলাদেশের দিকে

মো. আখতারুজ্জামান : একজন ক্রেতা এসে এখন কারখানার মান ও কর্ম পরিবেশ নিয়ে হুটহাট মন্তব্য করতে পারে না। কারণ বাংলাদেশ এখন এলইইডি সনদধারি কারখানার সংখ্যা ৬৭। সেই হিসেব বিশ্বের মধ্যে সব থেকে বেশি এলইইডি কারখানার দেশ বাংলাদেশ। এই দেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাস এখন একটা পরিণত বয়সে চলে এসেছে। এখন এমন কোনো পণ্য নেই যেটা বাংলাদেশ তৈরি করতে পারে না। এসব কারণে বিশ্বের ক্রেতারা এই বাজারের দিকে নজর দিচ্ছে। রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে দুই দিনব্যাপী ডেনিম এক্সপো-২০২২ অংশ গ্রহণকারিরা এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে ডেনিম এক্সপোর উদ্বোধন করা হয়। জানা যায়, এবারের এক্সপোতে ব্যবসা সম্প্রসারণে এ ধরনের আয়োজনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। দুদিনের ডেনিম এক্সপোতে অংশ নিয়েছে ১৬ দেশের ৮০ স্টল।
রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে ১০-১১ মে হয়ে গেলো ডেনিম এক্সপো-২০২২। এই এক্সপোয় অংশ নিচ্ছে ৮০ দেশি-বিদেশি কাপড়, পোশাক, সুতা, মেশিন, অনুষঙ্গ, সরঞ্জাম ও জিনস তৈরির প্রতিষ্ঠান। এবারের আয়োজনে গুরুত্ব পায়েছিলো করোনা পরবর্তী বিশ্বে ডেনিম ব্যবসার চ্যালেঞ্জ।
এক্সপোতে অংশ নেয়া পোশাক খাতের একসেসরিজ বা সরঞ্জাম উৎপাদককারি প্রতিষ্ঠান ইনডেট গ্রুপ। গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আল-শাহরিয়ার আহমেদ জানান, অন্যান্য এক্সপো বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন আসে। কিন্তু ডেনিম এক্সপোতে শুরুমাত্র এই খাত সংশ্লিষ্ট লোকজনই আসে। সেই হিসেবে আমার এবারে ভালো সারা পেয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানি এই এক্সপোতে প্রতিবছরেই অংশ নিয়ে থাকে। আমাদের কোম্পানি কি ধারণের পণ্য উৎপাদন করে থাকে সেটা তুলে ধরার জন্যই এখানে অংশ নিয়ে থাকি।
মঙ্গলবার ডেনিম এক্সপো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় ডেনিম পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে। কাঁচামাল উৎপাদনে আরো স্বনির্ভর হতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের পুরো অর্থ বছরের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে ১০ মাসেই। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার পাশাপাশি এই খাতে রপ্তানি আদেশ বেশি হওয়ায় তা সম্ভব হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি আয় ছিল যেখানে ২৬ হাজার মিলিয়ন ডলার, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৩৬২ মিলিয়ন ডলারে। ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো শুধুমাত্র নিরাপদই নয়, বরং সেগুলো আরও গতিশীল, আধুনিক, জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠেছে। সর্বোচ্চ সংখ্যক সবুজ কারখানা এখন বাংলাদেশে।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ক্রেতা টেকসই শ্রম খাতের কথা বললেও পোশাকের ন্যায্য দাম দেয় না। এটা টেকসই পোশাক খাতের জন্য বড় বাধা। তিনি বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ এবং শ্রম অধিকার ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এখন প্রতিটি কারখানায় সেফটি কমিটি আছে, ট্রেড ইউনিয়ন বাধ্যতামূলকসহ দেশের শ্রম আইন বিশ্বমানের হয়েছে। এর সুফল পাচ্ছে পোশাক খাত। তিনি বলেন, টেকসই সরবরাহ চেইনের স্বার্থে টেকসই দর নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ক্রেতা, ব্র্যান্ডসহ আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকায় আসতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (এলইইডি) সনদ দেয়। এই সনদ পাওয়া বাংলাদেশি কারখানার সংখ্যা ৬৭। বাংলাদেশের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫০ পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। অন্যদিকে, ভারতে এ ধরনের কারখানা রয়েছে মাত্র পাঁচটি।
