ব্যবসায়ীদের ঘরে ঘরে সয়াবিন তেলের মজুত
মো. আখতাজ্জামান : ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে বাংলাদেশে দফায় দফায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি বিশ্ব¦বাজারে তেলের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা সয়াবিনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বারবার দেশের বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও সরকারে সঙ্গে বৈঠক করে, আবার কখনও বৈঠক না করেই এই দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা। তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে জব্দ করা সয়াবিনের পরিমাণ বলে দিচ্ছে ভিন্ন কথা। তাদের অভিযানে দেখা যায় ব্যবসায়ীরা ঘরে ঘরে এখন সয়াবিন তেল মজুত করছে।
গত ৩ দিনে দেশব্যাপী সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অভিযান পরিচালনা করে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে।
এরমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে করা শুধু বৃহস্পতিবারের অভিযানে উদ্ধার করা হয় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ লিটার ভোজ্য তেল।
খুলনায় তিন প্রতিষ্ঠান থেকে মজুত করা দুই লাখ ৩৬ হাজার ৬৪০ লিটার সয়াবিন ও পামওয়েল উদ্ধার করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় তিন প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ২৪০ লিটার সয়াবিন তেল ও ২০০ কেজি চিনি অবৈধভাবে মজুতের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার সময় নুর কবির (২৭) নামের স্থানীয় এক ব্যক্তিকে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা। অপরদিকে খাগড়াছড়ি বাজারে নারায়ণমন্দির–সংলগ্ন নিজাম স্টোরেখাগড়াছড়িতে এক ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে ৩ হাজার ৭০০ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তেলের অবৈধ মজুত ঠেকাতে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবার ২ লাখ ৬ হাজার ৬৬৩ লিটার ভোজ্য তেল উদ্ধার করে। প্রতিষ্ঠানটি বুধবার সারাদেশে ভোক্তা অধিকারের ৫৮টি টিম অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে মজুদকৃত ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৬৯ লিটার ভোজ্যতেল উদ্ধার করে। এ সময় ১১৪ প্রতিষ্ঠানকে ২১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মঙ্গলবার রাজশাহীর বাগমারা ও পুঠিয়া, ঈশ্বরদী, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, পটুয়াখালীর দুমকি এবং কুষ্টিয়ায় অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এ সময় ২ লাখ ২৪ হাজার ৫৩৪ লিটার ভোজ্যতেল উদ্ধার করা হয়েছে। জরিমানা করা হয় প্রায় ৬ লাখ টাকা।
এর আগে দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য সরকার সয়াবিন তেল আমদানিতে ছাড় দিয়েছে। এর পরেও বাড়ছে দাম। রোজার আগে হঠাৎ করে দেশের বাজারে সয়াবিনের সরবরাহ কমিয়ে অস্থিরতা তৈরি করে দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা। সেই সময়ে শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকটি সয়াবিন তেল তৈরি প্রক্রিয়াজতকরণ কারখানায় অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় প্রত্যেকটি কারখানায় তেল সরবরাহের অসংগতি পায়। যদিও ভোক্তা অধিপ্তর থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয় যে এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারণে তা প্রতিষ্ঠাটি আর জানায়নি।
পরে রোজার শেষ পর্যায়ে আবারও সয়াবিনের বাজার অস্থিত করে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে ২০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি শুরু করে। পরে সরকারের হস্তক্ষেপে খেলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিলো ১৪০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৯৮ টাকা করা হয়। যা আগে ছিলো ১৬০ টাকা। সেই সময়ে ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে দাবি করে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে তাই বাজারে সরবরাহ কম। ফলে দাম বাড়ছে। নতুনভাবে দাম না বাড়ালে আরও সংকট তৈরি হবে।
এর পর শুরু ভোক্তা অধিদপ্তর সয়াবিন তেল মজুতকারির খোঁজে মাঠে নামলে ভিন্ন চিত্রি উঠে আসে। ব্যবসায়ীদের গোডাউনে গোডাউনে তেলের মজুতে দেখতে পায়। বেশি কিছু ব্যবসায়ীর তেল জব্দ করা হয়। সঙ্গে জরিমানাও করা হয়।
তেলের দাম বাড়তে পারে এমন আভাস পেয়ে ঈদের আগে তেল বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের পর বোতলজাত তেলের লিটার ৩৮ টাকা আর খোলা তেল ৪৪ টাকা বাড়ানোর পরও বাজারে সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। পরে অভিযানে নামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বেরিয়ে আসে বেশি দামে বিক্রির জন্য তেল লুকিয়ে রাখার প্রমাণ। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলায় দেড় থেকে দুই লাখ লিটার লুকিয়ে রাখা তেল বের করে তা বিক্রির ব্যবস্থা করছে ভোক্তা অধিকারের ভ্রাম্যমাণ আদালত।