
তেল-পেঁয়াজের পর এবার বাড়লো রসুন ও ডিমের দাম

মাসুদ মিয়া : দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপন্যোর দাম। ভোজ্যতেলের ও পেঁয়াজের পর এবার বাড়লো রসুনও ডিমের দাম। নিত্যপনোর দাম অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষ। সপ্তাহ ব্যবধানে রসুনের দাম কেজিতে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে ডিমের ডজনের দাম বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা। আবার বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়লেও আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি পেঁয়াজ, ডিম কিনতেও বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে কিছু সবজির দাম কমেছে। আর রোজায় ৭০০ টাকা কেজিতে পৌঁছে যাওয়া গরুর মাংস এখনো ওই দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা দেশি রসুনের কেজি বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কয়েকদিন আগে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা রসুনের দাম বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা হয়েছে।
রসুনের দাম বাড়ার বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, এখন বাজারে দেশি রসুনের সরবরাহ অনেক কম। এ কারণে দেশি রসুনের দাম বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতি থাকলে সামনে রসুনের দাম আরও বাড়তে পারে। এদিকে গত মাসে ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে ভোজ্যতেলের দাম। ঈদের আগেই খুচরায় সয়াবিন তেলের কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। সেই সঙ্গে বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ প্রায় নেই হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়া এতে বাজারে সয়াবিন তেল আসতে শুরু করে। দাম বাড়ানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে অভিযান। এতে মজুত থাকা বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল উদ্ধার করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে বাজারে এখন ভোজ্যতেলের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে দাম কমেনি।
খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা। পাম অয়েলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। আর বোতলের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে থেকে ৯৮৫ টাকা থেকে হাজার টাকা।
তেলের দামের বিষয়ে রোকনপুর বাজারের ব্যবসায়ী বলেন, সয়াবিন ও পাম অয়েলের যে দাম বেড়েছে। কবে কমবে তা জানিনা তবে কয়েকদিন আগে বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছিল না, সেই পরিস্থিতি এখন নেই। এখন তেলের সরবরাহ অনেকটাই স্বাভাবিক।
এদিকে আমদানি বন্ধের খবরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ঈদের আগে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম ঈদের পর কয়েক দফা বেড়ে এখন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর পাঁচভাই ঘাটলেন খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নজমুল বলেন, বাজারে এখন দেশি ও আমদানীকৃত পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। মূলত আমদানি বন্ধ থাকায় পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। এর ফলে খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে।
এদিকে ঈদের আগে ৭০০ টাকা কেজিতে ওঠা গরুর মাংসের দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা বিক্রি করছেন।
গরুর মাংস বাড়তি দামে বিক্রি হলেও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। ঈদের আগে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মুরগির দাম কমে এখন ১৬০ টাকা থেকে ১৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে সোনালি মুরগির কেজি আগের মতই ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমার বিষয়ে রায়সাহেব বাজারে ব্যবসায়ী জাজির বলেন, ঈদের পর ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কমেছে। এখন বিক্রি খুব কম হচ্ছে। এ কারণে দাম কমতির দিকে। আমাদের ধারণা সামনের সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম আরও একটু কমতে পারে।
এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো ব্যবসায়ীরা বেগুনের কেজি বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা। শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বরবটিও আগের মত ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর ৩০ টাকার কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা।
অন্যদিকে পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙে, চিচিঙ্গার দাম কিছুটা কমেছে। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঢেঁড়সের দাম। ঝিঙে ও চিচিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। করলার কেজি বিক্রয় হচ্ছে ৫০ টাকা।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী কাশেম বলেন, ঢেড়স, পটল, ঝিঙে, করলার চিচিঙ্গার সরবরাহ বাড়ায় এগুলোর দাম কমেছে। এদিকে নিত্যপনোর দাম বাড়ার বিষয়ে রায়সাহেব এলাকার বাসিন্দা হাসিব বলেন, দ্রব্যমূল্য প্রতিনিয়ত অকল্পনীয়ভাবে বেড়েই চলেছে। মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত মধ্যবিত্ত মানুষেরা সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে। যেভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও ইনকাম বাড়ছে না।
এদিকে চালের দাম কমছে না প্রতিকেজি নাজিরশাইল, মিনিকেট ও বাশমতি নামের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬৫-৭০ টাকায়। এছাড়া মোটা মানের স্বর্ণা ও চায়না ইরি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ এবং মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছের দামে তেমন পরিবর্তন আসেনি। রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ৪০০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। তেলাপিয়া, পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। শোল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং কৈ মাছ পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা কেজিতে। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
