একলাফে সরিষার তেল কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা
মো. আখতারুজ্জামান : দীর্ঘ দিনে থেকে অস্থির ভোজ্য তেল সয়াবিনের বাজার। এই তালিকা যুক্ত হলো দেশে উৎপাদিত ভোজ্য তেল সরিষারও। রাজধানীর বাজারগুলোতে খোলা বাজারে প্রতিকেজি সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে মিলছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়, যা আগে ছিলো ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়।
প্যাকেটজাত ও খোলা এই দুইভাবে সরিষার তেল বিক্রি হয়ে থাকে। তবে বাজারে বিভিন্ন ধরণের সরিষার তেল রয়েছে। খোলাভাবে মেশিনে ভাঙানো গাছের ও ঘানিতে ভাঙানো সরিষার তেল পাওয়া যায়। মেশিনে ভাঙানো তেল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। আর ঘানি ভাঙানো তেল মিলছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাজারসহ ফকিরাপুল, মালিবাগ বাজার, শান্তিনগর বাজার ঘুরে সরিষার তেল ২৮০ টাকায় বেচতে দেখা গেল। পাঁচ কেজির দাম এক হাজার ৪০০ টাকা। মালিবাগ বাজারের সরিষার তেলের ক্রেতা আল অমিন বলেন, রোজার আগে থেকে সয়াবিন তেলের সংকট ভীষণভাবে দেখা দিলে আমরা সরিষা তেল কিনতে শুরু করি। সরিষার তেলের দাম গত ছয় মাস আগে ছিল ১৮০-২০০ টাকা। রোজার আগে এই দাম বেড়ে ২২০-২৮০ টাকায় গড়ায়। গত এক সপ্তাহ যাবত এই তেল খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়।
মগবাজার টিএনটি কলোনি এলাকায় রাস্তার ধারে ভ্রাম্যমাণ মেশিনে সরিষা ভেঙে তেল বেচছিলেন সোলায়মান। প্রতি সপ্তাহে একদিন এই এলাকায় আসেন তিনি।
সোলায়মান জানান, কয়েক মাস আগেও সরিষা তেল আচার, ভর্তার জন্য সরিষার তেল কিনতেন ক্রেতারা। সয়াবিন তেলে দাম বৃদ্ধি কারণে অনেকেই এখন রান্নার কাজে সরিষার তেল ব্যবহার করছেন। ফলে আমাদের বিক্রিও কিছুটা বেড়েছে। চাহিদা বাড়ায় সরিষা তেলের দাম বেড়েছে। আর সরিষার দাম বাড়ার ফলে আমাদেরও খরচ বেড়েছে। এতে করে দাম কিছুটা বৃদ্ধি করতে হয়েছে। এখন প্রতিমণ সরিষার দাম সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। আগে মণ ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা।
সরিষা তেলের চাহিদা বাড়ছে শহরে, সেজন্য পাইকারি পর্যায়ে সরিষার দামও বাড়ছে। বেশি টাকায় এনে সরিষা থেকে তেল করে আবার বিক্রি করা- খুব একটা লাভ আমাদের হয় না।
শান্তিনগর বাজারে কথা হলো মুদি দোকানি আবদুল লতিফের সঙ্গে। তার কথায়, বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট থাকলেও এখনও সরিষার তেলের দাম বাড়ানো হয়নি। রোজার আগে একবার বেড়েছিল। বর্তমানে এক লিটার বিভিন্ন কোম্পানির সরিষার তেলের দাম ৩৪০-৩৫০ টাকা। অন্যদিকে খোলা সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
শান্তিনগরে তেল কিনতে আসা শফিক আহমেদ বলেন, এখনও বাজারে সয়াবিন তেল সেইভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্য সরিষা তেল নিতে হচ্ছে। সেখানেও দেখি সয়াবিনের উত্তাপ। যারা ব্যবসা করেন, তারা তো আর ধর্মের কথা শোনে না। ক্রেতাদের দুর্ভোগের কথা জানতে চায় না। ওরা লাভের কথা শোনে। সুযোগ পেলে লাভের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়- এটাই এখন নিয়ম। কেউ দেখবার নেই। আমরা আছি বিপাকে। পাশে থাকা তার সহধর্মিনী সুলতানা আহমেদ যোগ করেন, সয়াবিন তেল ও সরিষার তেলের দাম এখন প্রায় কাছাকাছি। সয়াবিনের তেলের তুলনায় সরিষার তেল স্বাস্থ্য সম্মত। স্বাদও আলাদা। ভাবছি এখন থেকে এই তেলই রান্নার কাজে বেশি ব্যবহার করব। অন্যদিকে বাগেরহাট শহরের প্রধান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে, খোলা সরিষার তেল প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মাত্র তিন মাস আগেও বাগেরহাটে সরিষার তেলের কেজি ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
কয়েক ধাপে বৃদ্ধি পেয়ে তা ২৬০ টাকায় পৌঁছেছে। সেভেন স্টার নামের একটি স্থানীয় সরিষার তেল কোম্পানির বোতলজাত তেল খুচরা বাজারে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। লোকাল মিলগুলোতেও সরিষার তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা।