এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাই না যাতে বাজার অস্থিতিশীল হয় : বাণিজ্যমন্ত্রী
সোহেল রহমান : বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি বলেছেন, আমি বৈশ্বিক সমস্যার মধ্যে আছি। আন্তর্জাতিক অবস্থা ভালো থাকলে দেশের অবস্থাও ভালো থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ বাংলাদেশের খাদ্যপণ্যে প্রভাব ফেলেছে। তেল, চিনি, ডালের দাম নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। সেজন্য সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। সামনের দিকে কিছুটা সংকট রয়েছে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
সোমবার সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম’ (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’-এ তিনি এ কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখে অনেকে প্রচার করছে সে ধরনের অবস্থা হতে পারে। সেরকম কোনো আশঙ্কা নেই। আমরা নিজেরাই শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিয়েছি। ‘ব্যবসায়ীরা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে কি না’- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীবান্ধব। সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত না। আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম অনুযায়ী দাম ফিক্স-আপ (নির্ধারণ) করে দেই। সে অনুযায়ী বাজারে দামটা থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না, বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাই। এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাই না যাতে বাজার অস্থিতিশীল হয়।
প্রসঙ্গক্রমে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তেলের ৯০ ভাগ আমাদের আমদানি করে আনতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দামের প্রভাব পড়লে দেশেও দাম বেড়ে যায়। কয়েকটি পণ্য আছে যেগুলো আমরা মনিটর করি। ঈদের আগে তেলের দাম নিয়ে অনেক কথা এসেছে। প্রতি মাসে একবার বসে ট্যারিফ কমিশন এই দামটা নির্ধারণ করে। সবকিছু অ্যাভারেজ করে দামটা নির্ধারণ করা হয়। আমাদের একটা বিশেষ কারণ ছিল, গত ঈদের মাসটাতে (রমজান) আমরা দামটা বাড়াতে চাইনি। ব্যবসায়ীদের বলেছিলাম, এই সময়টা ম্যানেজ করেন। তাই যে সময়ে দামটা ফিক্স (নির্ধারণ) করা হয়, সেখানে কিছুটা বিলম্ব হয়। ব্যবসায়ীরা জানতেন ঈদের পর দাম বাড়বে, তারা সেই সুযোগ নিয়েছেন। তবে আমাদের ভুল হয়েছে টানা দুই মাস তেলের দামটা নির্ধারণ করিনি, যদি করতাম তাহলে তারা সুযোগটা নিতে পারতেন না। এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামটা বেড়েছিলে, তাই সেটি আগে ফিক্স (নির্ধারণ) করলে সমস্যাটা হতো না।
ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রচুর ব্যবসায়ীকে আমরা ধরছি। সেখানে অনেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে এবং জেলেও পাঠানো হয়েছে। উদ্ধারকৃত ভোজ্যতেল ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করছে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
গম আমদানির বিষয়ে তিনি বলেন, ভারত গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর সরকার আরও পাঁচটি দেশ থেকে গম আমদানির পথ খুঁজছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে গম আমদানির বিষয়ে কথা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত আমাদের গম দেবে। গমের বিষয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।
পেঁয়াজের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম একটু চড়া। তবুও দাম মানুষের নাগালের মধ্যেই আছে। পেঁয়াজের আইপি বন্ধ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষকরা যাতে দাম পান সেটি দেখতে হবে। আমরা দেখছি কৃষকরা যাতে অন্তত ২৫ টাকা পান। বাকি ট্রান্সপোর্টসহ অন্য খরচ মিলে ঢাকার মানুষ ৪৫ টাকায় যাতে খেতে পারেন। কৃষকরা যাতে দাম পান এবং ভোক্তারাও যাতে কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারেন সেটি আমরা দেখছি।
সোমবার থেকে টিসিবির মাধ্যমে ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্য বিতরণ কেন স্থগিত করা হয়েছে, জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, শহরের এই মানুষগুলোকে দেয়া হচ্ছে, গ্রামের মানুষকে তো দেয়া হচ্ছে না। তোমরা একটু সময় নিয়ে দাও। ঢাকা-তে আমরা একটু সময় নিয়ে দেব। এর আগে ঢাকা-তে আমরা কোনো তালিকা পাইনি, যে নেটওয়ার্কে গ্রামে দেওয়া হয়েছিল। আমরা আগামী মাস থেকে ১ কোটি পরিবারকে তেলসহ অন্যান্য পণ্য সরবরাহ করব।
বর্ডার হাট সম্পর্কে তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম বিষয়টি নিয়ে। আশা করছি তিন-চারটি প্রোপাজাল দেবো। মিজোরামে গিয়েও আলোচনা হয়েছে। ছোট রাজ্য হলেও তারা এটি খুব পজিটিভলি দেখছে। এটা সাজেকের কাছাকাছি, ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে। এ বিষয়টি নিয়ে দ্রুত দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গক্রমে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কিছু কিছু ভালো কাজ করতে পেরেছি। আমরা ৬০ বিলিয়ন রপ্তানি করতে পারবো বলে আশা করছি। ২০২৪ সালে ৮০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে পারবো বলে আশা করছি। ১৫০টির বেশি দেশে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য পাঠাতে পারছি। গার্মেন্টস সেক্টরে আরেও ১০ লাখ কর্মী যুক্ত হবে বলে আশা করছি।