বাজার সহনীয় রাখার চেষ্টা করছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী
অর্থনীতি ডেস্ক : সরকারি-বেসরকারি সব খাতে সব বিষয়ে সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ-পানি থেকে শুরু করে কোনো কিছুই অপচয় করা যাবে না বলে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীকে আমি অনুরোধ করবো, সবাই যদি একটু সাশ্রয়ী হয়, মিতব্যয়ী-ব্যবহারে সতর্ক হয় তাহলে খুব সমস্যা হওয়ার কথা না। দ্রব্যমূল্য বেড়েছে যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে এ কথা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে। এখানে অনেকে সমালোচনা করবে। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলে তাও কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। যদি অন্য কেউ থাকতো, দেশের যে কী অবস্থা হতো! রাস্তায় রাস্তায় মারামারি শুরু হয়ে যেত, সেটা হয়নি। আমরা সেই জায়গা থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে পেরেছি। যেগুলো আমার এখনই প্রয়োজন সেগুলো আমরা করবো, যেগুলো এখনই প্রয়োজন না সেগুলো একটু ধীর গতিতে করবো। যেন আমাদের অর্থনীতির ওপর চাপটা না আসে। কারণ যেখানে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের দিকে যাচ্ছে সেখানে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। টাকা খরচের ক্ষেত্রে বা সব ক্ষেত্রেই আমরা অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। অহেতুক আমাদের সম্পদ যেন আমরা ব্যয় না করি।
তিনি আরও বলেন, করোনা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আমাদের অর্থনীতির ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে। শুধু আমরা না, পৃথিবীর সব উন্নত ও অনুন্নত দেশে এই সমস্যা। ইউরোপের এমন এমন দেশ আছে যেখানে ১৭ থেকে ৫০ শতাংশ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। জার্মানির মতো জায়গায় ভোজ্য তেলের অভাব। একমাত্র অলিভওয়েল ছাড়া কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। ইংল্যান্ডে তেল নির্দিষ্ট করে দেওয়া, ১ লিটারের বেশি কেউ নিতে পারবে না। আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি ৮ ভাগের উপরে উঠে গেছে, ১০ ভাগে পৌঁছে যাবে। ১ ডলারের ডিজেল-পেট্রোল ৪ ডলারের উপরে উঠে গেছে। সেখানে মানুষের একবেলা খেতেই কষ্ট। বিশ্বব্যাপী এই অবস্থা বিরাজমান।
তারপরও আমরা আমাদের অর্থনীতি সচল রাখতে পেরেছি কিন্তু এর প্রভাব তো পড়বেই। যখন আমাদের আমদানি করতে হয়, কারণ দাম তো বেড়ে গেছে। আমাদের জাহাজ ভাড়া হয়ে গেছে। আর যেখানে যেখানে উৎপাদন হতো, উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে যুদ্ধ এবং করোনার কারণে। ফলে আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি ও জিনিসের দাম তো বাড়বেই, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
পদ্মাসেতু এবং রেলসেতুর একটি টাকাও কারও কাছ থেকে ঋণ বা ধার করা হয়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে করা হচ্ছে। এটা সমালোচনাকারীদের জানা উচিত। একেবারে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা দিয়ে আমরা তৈরি করছি। তারা অর্বাচীনের মতো মিথ্যা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে, এটা গ্রহণ করা যায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মাসেতু নিয়ে অনেক কথা। তারপর এলো পদ্মাসেতুর রেল লাইন, বলা হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে করার কি দরকার ছিল? কারা চড়বেৃ? আমি অপেক্ষা করছি, রেললাইন যখন চালু হবে তখন তারা (সমালোচনাকারীরা) চড়ে কিনা? এই মানুষগুলোকে আমার মনে হয় ধরে নিয়ে দেখানো দরকার হবে, রেল সেতুতে মানুষ চড়ে কিনা?
পদ্মা একটি খরস্রোতা নদী জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে খরস্রোতা নদীর মধ্যে রয়েছে আমাজন এবং পদ্মা। সেই নদীর উপর রেললাইন দিচ্ছি। রেল লাইন নিয়েও তাদের সমালোচনা যে, এতো টাকা কেন খরচ করা হলো? কিন্তু এই একটা সেতু নির্মাণ হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের যে আমাদের জেলাগুলি-অঞ্চলগুলি আছে সেখানে যে অর্থনীতির গতিশীলতা আসবে, এই মানুষগুলোর চলাচল, পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে। সেটা তারা একবার ভেবে দেখেছে? এই রেলসেতু তো মোংলা পোর্ট পর্যন্তই সংযুক্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতে পায়রা পোর্ট যখন আমরা করবো, পায়রা পোর্ট পর্যন্ত যাতে সংযুক্ত হয়, সেই ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি।
কিন্তু সেটার এই মুহূর্তে খুব বেশি প্রয়োজন নেই বলে আমরা একটু ধীর গতিতে যাচ্ছি। এমনকি আমরা যখন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করলাম, তখনও তারা বলছে এটার কি দরকার ছিল? যাই করবেন তাতেই বলবে, এটার কি দরকার ছিল? তাদের জন্য দরকার না থাকতে পারে, কিন্তু আমার দেশের মানুষের জন্য দরকার আছে। তবে আমি মনে করি, আমাদের করা সব সুযোগ-সুবিধা ব্যবহারও করবেন, আবার সমালোচনাও করে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন। এটা বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু জানে। আর বাংলাদেশে কতগুলি নাম আর চরিত্র আছে, এদের আমরা চিনি, বলেন শেখ হাসিনা। এজন্য দেশবাসীকে নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। আসলে আমি এত বড় দায়িত্ব নেব এটা কখনো ভাবিনি। কাজ করতাম, রাজনীতিতে ছিলাম স্কুলজীবন থেকে মিছিল-মিটিংয়ে গেছি। কলেজে নির্বাচন করেছি, সবেই করেছি কিন্তু কখনো চিন্তাই করতে পারিনি আমাদের ক্ষমতায় যেতে হবে বা কোনো কিছু হতে হবে। এটা কিন্তু কখনো চিন্তায় ছিল না। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফিরেছিলাম ১৭ মে আমাকে কিছু করতে হবে দেশের জন্য। সূত্র : বাসস