এয়ারলাইন বেচে দেবে শ্রীলঙ্কা, বেতন দিতে ছাপানো হচ্ছে মুদ্রা শুধু ১ দিনের পেট্রোল আছে আমাদের : রনিল বিক্রমাসিংহ
অর্থনীতি ডেস্ক : শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, অর্থনৈতিক সংকটে টালমাটাল শ্রীলঙ্কার পেট্রলের মজুদ শেষ দিনে নেমে এসেছে। সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
জরুরি আমদানির জন্য শ্রীলঙ্কার জরুরিভিত্তিতে ৭৫ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে রনিল বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে শুধু ১ দিনের পেট্রল আছে। আগামী কয়েক মাস আমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় হবে। আমাদের ত্যাগ স্বীকার এবং এই সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।
ভারতীয় ক্রেডিট লাইন ব্যবহার করে দেশে আনা ২টি পেট্রল এবং ২টি ডিজেলের চালান আগামী কয়েক দিন স্বস্তি দিতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে, শ্রীলঙ্কা ১৪টি প্রয়োজনীয় ওষুধের ঘাটতিরও মুখোমুখি হচ্ছে বলে জানান রনিল। জ্বালানি সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কার বাডুজ্যক রাজধানী কলম্বোতে গ্যাস স্টেশনগুলোতে অটোরিকশার দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও ফিরে যেতে হচ্ছে অনেককে।
মোহাম্মদ আলী নামের এক চালক রয়টার্সকে বলেন, আমি ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। পেট্রোল পেতে আমাদের প্রায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। মোহাম্মদ নওশাদ নামের আরেক চালক বলেন, তিনি প্রথমে যে গ্যাস স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন, সেটির জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে। আমরা সকাল ৭টা-৮টা থেকে এখানে আছি। তাদের জ্বালানিও থাকবে কি না, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। কার পালা কখন আসবে, কেউ জানে না। এখানে অপেক্ষা করার কোনো অর্থ হয় কি না, তাও জানি না আমরা।
এই সংকট কাটিয়ে উঠতে এবার রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন বেচে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে দেশটির নতুন সরকার। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন দেওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে নতুন মুদ্রা ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে। সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে জানান, নতুন প্রশাসন শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সকে বেসরকারীকরণের পরিকল্পনা করছে। গত বছর শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনে ৪৫ বিলিয়ন রুপি লোকসান হয়েছে। বিক্রমাসিংহে বলেন, দরিদ্র যারা বিমানে পা রাখেননি তাদের এমন ক্ষতি বহন করা উচিত হবে না।
গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। এরমধ্যেই সরকারি কর্মীদের বেতন দিতে নতুন মুদ্রা ছাপাতে বাধ্য হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে আরও চাপ বাড়াবে।
এ নিয়ে বিক্রমাসিংহে বলেন,আমাদের পেট্রোল ফুরিয়ে গেছে। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে মাত্র আর এক দিনের পেট্রোল মজুত রয়েছে। বেতন দিতে নতুন অর্থ ছাপাতে বাধ্য হচ্ছি। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর এখন সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। যদিও দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপক্ষে এখনো পদত্যাগ করেননি। নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটকে কেন্দ্র করে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করেন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান রনিল বিক্রমাসিংহে। সূত্র : ডেইলিস্টার বাংলা, বিডি২৪লাইভ, বাংলানিউজ