যেখানে হাত দিচ্ছি সেখানেই অনিয়ম পাচ্ছি : ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক
নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান দেশের বাজার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানান, বাজারে তেল, ডাল, পেঁয়াজ, গম, চিনি, পোশাক, জুতা সবখানেই অনিয়মের রাজত্ব। যেখানেই হাত পড়ছে, সেখানেই অনিয়ম ধরা পড়ছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক্স রিপোর্টার্স ফোরাম (আইআরএফের) এক সেমিনারে এসব কথা জানান সরকারের এই অতিরিক্ত সচিব। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর কাদের শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন ইআরএফের সভাপতি শিরীন শারমিন ও সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশেদুল ইসলাম।
সফিকুজ্জামান বলেন, ভারতের নাসিকে বৃষ্টি হচ্ছে, আর বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ভারত গম রপ্তানি বন্ধের পর দিনই দেশে গমের দাম বেড়েছে। ডাল চিনি তো একই অবস্থা। ভোজ্যতেলের কারসাজি তো সবারই জানা। মিলারদের কারসাজি আমরা দেখেছি। এরপর ডিলার পাইকারি ও খুচরা পর্যায়েও কারসাজি দেখলাম। বেনারসি পল্লীতে ৫ হাজার টাকার শাড়িতে ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ট্যাগ দেয়া হয়। জুতার দোকানেরাও একই অবস্থা।
সফিকুজ্জামান ভোক্তার স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা দাঁড়িয়ে থাকছে। তা থেকে ধারণা করা যায়, চিকিৎসকরা কোম্পানির সুপারিশে ওষুধ লিখছেন। আবার ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীর প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে নিচ্ছে। এতে রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হচ্ছে।
ইংরেজি মাধ্যম কোনো কোনো স্কুলে ভর্তির সময়ই কয়েক মাসের বেতন আগাম নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বই, খাতা, কলম, পোশাক স্কুল থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। কক্সবাজার পর্যটন কেন্দ্রে ছবি তোলা, বাইক চালানো, ঘোড়াসহ বিভিন্ন লোকেরা পর্যটকদের চারপাশে সারক্ষণ ঘুরঘুর করছে। পর্যটকরা নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারছে না।
কোনো সেবা নিলে উচ্চ হারে মূল্য দিতে হচ্ছে। ওয়াসা, ডেসা, তিতাস থেকেও মানুষ যথাযথ সেবা পাচ্ছে না। পানির মান ভালো না। গ্যাসের চাপ কম থাকে। বিদ্যুতে লোডশেডিং হচ্ছে। বিমান সময়মতো ছাড়ছে না। এক কথায় যেখানেই হাত দিচ্ছি, সেখানেই অনিয়ম পাচ্ছি।
এ ধরনের অনিয়ম বন্ধে আইন অনুযায়ী ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়ে এটির মহাপরিচালক বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা সঠিক তথ্যের অভাব। এই সংস্থার তথ্যের বৈধ উৎস নেই। ভোক্তা বা ব্যক্তিগত উৎস থেকে যে তথ্য পাওয়া যায়, সেগুলোর সঠিকতা যাচাই করারও সুযোগ নেই। এ জন্য ভোক্তা অধিদপ্তর সকল গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃংখলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি জানান, পাশাপাশি বিদ্যমান আইনেও অনেক দুর্বলতা আছে। সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ইতিমধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই এটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পেয়ে জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হবে। সংশোধিত আইনে ভোক্তা অধিকার আরও সুসংহত হবে বলে দাবি করেন তিনি।
সফিকুজ্জামান বলেন, তথ্য অনুযায়ী তেলের সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সংকট হয়েছে। কোম্পানিগুলো উৎপাদন কমিয়েছে। ব্যবসায়ীরা সরবরাহ আদেশ ধরে রাখছে। এক কথায়, এই বাজারে এক ধরনের মনোপলি বা সিন্ডিকেট হয়ে গেছে। এসব জেনে-বুঝেও কিছু করার থাকছে না।
ইআরএফ’র সহসভাপতি শফিকুল আলম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে ব্যবসার ধরণ পাল্টেছে। আবার ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতাও বেড়েছে। ফলে ভোক্তা অধিকার আইনটি সংশোধন করতে হবে। আইন ভঙ্গের শাস্তি আরও কঠোর করতে হবে। ভোক্তা অধিদপ্তরের গবেষণা ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ক্যাবের উপদেষ্টা কাজী আব্দুল হান্নান। এতে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম ও আইন নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রজবী নাহার রজনী।