গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চেষ্টা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত : এফবিসিসিআই
মো. আখতারুজ্জামান : বর্তমানে যে অবস্থা চলতে তাতে এখনই গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চেষ্টা, আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
শনিবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই মিলনায়তনে সংগঠনটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
জসিম উদ্দিন বলেন, কোনোভাবেই এ মুহূর্তে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যাবে না। দাম বাড়লে অর্থনীতিতে বড় রকম ক্ষতি হবে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে আরো। তাদের মতে- গ্যাস ও বিদ্যুৎের দাম বাড়বে কি না, এ সিদ্ধান্ত আসতে হবে রাজনৈতিকভাবে; আমলাদের থেকে নয়। দেশের বাজারে হু হু করে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যসহ সব পণ্যের দাম। আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলার বেশি খরচ করতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে ডলারের দাম। অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। এখন টিকে থাকাটাই হিমশিম।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এর পরও যদি দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেটি ব্যবসায়ীদের ওপর না চাপিয়ে বিদ্যুৎ খাতের তহবিল থেকে ভর্তুকির মাধ্যমে সমন্বয় করা হোক। আমরা যদি ১৩ টাকা গ্যাসকে ২৮ টাকা করে দেই, তাহলে গ্যাস হয়তো থাকবে। তবে ইন্ডাস্ট্রি থাকবে না। দাম বাড়ালে উৎপাদন খরচও বাড়ানো হবে, এতে আমরা দুর্বল পরিস্থিতির শিকার হব। আমাদের ব্যবসায়ের ব্যয় ও উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।
জসিম উদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে এখন সরকারের উচিত হবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের আমূল সংস্কার আনা। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। বিদ্যুতের অতিরিক্ত উৎপাদন বন্ধ করে অহেতুক খরচ কমিয়ে আনা।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার উল আলম বলেন, দেশে এখন ডলার সঙ্কট চলছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। এখন যদি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, উৎপাদন খরচ বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে ভোক্তার ওপর। গ্যাস বিদ্যুৎতের দাম বাড়ানোর চেয়ে অপচয় রোধ করার ওপর জোর দেন ব্যবসায়ীরা।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এমন সময় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ালে পণ্যের দাম আরও বাড়বে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের পরিচালনা দক্ষতা, ন্যূনতম ব্যয় এবং বিতরণে আন্তর্জাতিক মান ও কৌশল অনুসরণ করা হয়নি। এছাড়া সরবরাহ ব্যবস্থা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালনা করা হয়নি। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, শিপিং ও পরিবহন ব্যয় অত্যধিক বেড়ে গেছে।
এর প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি খাতের পক্ষে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে দাম না বাড়িয়ে কৌশলগত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি বিদ্যুৎ-জ্বালানি নিয়ে সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার প্রস্তাব দেন ব্যবসায়ীরা।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে এফবিসিসিআইয়ের কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন। সুপারিশগুলো হলো- বার্ক আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা আমূল সংস্কার করা। অনিয়ম, অপচয়, অবৈধ সংযোগসহ যাবতীয় অপব্যবস্থা জরুরি নিরসন করা। অদক্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা। অহেতুক খরচ কমিয়ে আনা। বিদ্যুৎ ক্যাপাসিটি চার্জ বাতিল করে অলস উৎপাদনকারীকে অর্থ পরিশোধ বন্ধ করা। ভর্তুকি পাওয়া জ্বালানি খাতের ওপর শুল্ক মূসক প্রত্যাহার করা। গ্যাসের মূল্য সব খাতের জন্য সাধারণ হারে নির্ধারণ করা। সরবরাহ মূল্য বিদ্যমান হারে বজায় রেখে বাড়তি ব্যয় সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে সমন্বয় করা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, সাবেক সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, বিএসএমএ’র সভাপতি মনোয়ার হোসেন, বিসিএমএর সভাপতি মো. আলমগীর কবিরসহ প্রমুখ।