বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে
সোহেল রহমান : বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ বাড়ছে। আসন্ন বাজেটে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা প্রথমবারের মত ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ৮৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন বাজেটে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সঞ্চয়পত্র নির্ভরতা কমিয়ে আনার পর ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের প্রকৃত গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রকৃত নেয়া হয়েছে ৭৯ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে আগামী অর্থবছরে ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে নেয়া হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা এবং এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা।
বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত দুই-তিন বছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ আগের তুলনায় কমেছে। কিন্তু কমলেও সেটি আবার একটু একটু করে বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের প্রকৃত গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল ৫০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা (মূল বাজেটে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার কোটি ১৯৭ কোটি টাকা)। একই অর্থবছরে ব্যাংক-বহির্ভূত অন্যান্য খাত থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ২১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা (মূল বাজেটে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার কোটি টাকা)। ২০১৯-২০ অর্র্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে ব্যাংক-বহির্ভূত অন্যান্য খাত থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ১৩ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ খাতে গৃহীত ঋণের পরিমাণ ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে।
জানা যায়, আগামী অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এতে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ৫.৫৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতি জিডিপি’র ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। সে হিসাবে ঘাটতি কমছে। কিন্তু জিডিপি’র তুলনায় ঘাটতি কমলেও টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাড়ছে ৩০ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।