ফল ফার্নিচারসহ বিদেশি ১৩৫ পণ্য আমদানিতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ
মো. আখতারুজ্জামান : করোনা মহামারী পরবর্তী দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠন, বিলাসবহুল পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা ও আমদানি হ্রাসকরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের বিষয়ে কঠোর হয়েছে সরকার।
যদিও করোনার শুরু থেকে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বিলাশিতা পণ্য আমদানির বিষয়ে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। গত কয়েক মাসে রপ্তানির বিপরিদে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে কমতে থাকে রিজার্ভের পরিমাণ। আমদানি ব্যয় ও ডলারের দামে লাগাম লাগাতে উঠে পরেছে সরকার।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধের বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরে ব্যাংকারদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি ব্যাংকারা ব্যক্তিগত খরচেও বিদেশে ভ্রমণে যেতে পারবেন না বলে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবারের বিদেশী ফল, বিদেশী ফুল, কসমেটিকস, ফার্নিচার আমদানিতে নিরুসাহিত করতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্প আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
বিদেশি প্রায় ১৩৫টি এইচএস কোর্ড ভুক্ত বিলাশিতা পণ্যের উপর আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ০% ও ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। গত ২৩ মে থেকে কার্যকর হয়েছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানিয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মু’মেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ফুল ও ফল চাষে যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী। নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে দেশীয় ফুল ও ফল চাষীরা ন্যায্য মূল্য পাবে এবং ফুল ও ফল চাষে উৎসাহিত হবে। এতে করে দেশের প্রান্তিক চাষীরা লাভবান হবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমবে। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ফার্নিচার ও কসমেটিকস যথেষ্ট মানসম্পন্ন এবং দেশের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সক্ষম। ফার্নিচার ও কসমেটিকস এ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে বিদেশী পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশীয় শিল্প বিকশিত হবে। এছাড়াও এ ধরণের পণ্যের অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিতকরণের মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং সরকারের রাজস্ব আহরণে তা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
এসব পণ্যে এতো দিন কোনো ক্ষেত্রে শুল্ক ০ থেকে ৩ এবং ৫ শতাংশ ছিল। এবার এসব পণ্যে রেগুলেটরি ডিউটি আরডি ২০ ও ৩০ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়েছে। বর্তমানে পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কের সর্বোচ হার ৩৫ শতাংশ।
এনবিআর বলছে, বর্তমানে দেশে উৎপাদিত আসবাবপত্র ও প্রসাধন সামগ্রী যথেষ্ট মানসম্পন্ন এবং দেশের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সক্ষম। আসবাবপত্র ও প্রসাধনীর উপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে বিদেশী পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটবে। পাশাপাশি এ ধরণের পণ্যের অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিতকরণের ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে।
নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা পণ্যের তালিকায় আছে আসবাবপত্র ও আসবাবের কাঁচামাল, গাড়ি ও গাড়ির ইঞ্জিন, যন্ত্রাংশ, রড ও লোহাজাতীয় পণ্য, সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ফ্ল্যাই অ্যাশ, ফল, চাল, প্রসাধনসামগ্রী এবং ভোগ্যপণ্য। ২০ শতাংশ হারে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসেছে কাঠ ও লোহার আসবাব এবং আসবাবের কাঁচামাল, পিকআপ ও ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যানে ২০ শতাংশ এবং গাড়ির ইঞ্জিনে ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া টায়ার, রিম ইত্যাদির ওপর ৩ থেকে ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। এছাড়া নির্মাণসামগ্রীর কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত রড, বিলেট ইত্যাদির উপর ৩ থেকে ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসেছে। সিমেন্ট খাতের অন্যতম কাঁচামাল ফ্লাই অ্যাশ আমদানিতে ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো হয়েছে।
অন্যদিকে পারফিউম, চুল ও তকের যতœ নেওয়ার সামগ্রী, সেভ করার সামগ্রী, ইত্যাদি প্রসাধনসামগ্রীর উপর ২০ শতাংশ হারে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক দিতে হবে। অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, আর্গন, প্রাথমিক চিকিৎসাসামগ্রী আমদানি করতেও ১৫ শতাংশ হারে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো হয়েছে। ফাইবার অপটিক ও বিভিন্ন ধরনের তারে ৩ থেকে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক বসেছে। এছাড়া আম, আপেল, তরমুজ, বাদামসহ বিভিন্ন রকমের ফলের উপর ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসিয়ে এনবিআর বিদেশী ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।