
স্বর্ণের দাম কমল ভরিতে ২৯১৬ টাকা

অর্থনীতি ডেস্ক : অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ উচ্চতায় ওঠার পর স্বর্ণের দাম খানিকটা কমেছে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে সবচেয়ে ভালো মানের মূল্যবান এই ধাতুটির দাম ভরিতে ২ হাজার ৯১৬ টাকা কমে ৭৯ হাজার ৫৪৮ টাকায় নেমে এসেছে। গত পাঁচ দিন দেশের বাজারে এই মানের এক ভরি স্বর্ণ কিনতে ৮২ হাজার ৪৬৬ টাকা লেগেছে। শুক্রবার থেকে নতুন দর কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি- বাজুস।
আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম এবং যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারসহ অন্যান্য মুদ্রার দাম কমায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৮ মার্চ দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৯ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। তার চার দিন আগে ৪ মার্চ বাড়ানো হয়েছিল ভরিতে ৩ হাজার ২৬৫ টাকা।
এরপর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমতে শুরু করায় গত ১৫ মার্চ দেশের বাজারে ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ২১ মার্চ কমানো হয় ভরিতে আরও ১ হাজার ৫০ টাকা।
কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় গত ১১ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৮৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় ২৫ এপ্রিল প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হয়। সর্বশেষ ১০ মে একই পরিমাণ কমানো হয়েছিল।
দুই দফায় ভরিতে ২ হাজার ৩৩২ টাকা কমানোর পর ১৭ মে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস, ১৮ মে থেকে যা কার্যকর হয়। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ২১ মে সেই স্বর্ণের দাম এক ধাক্কায় ভরিতে ৪ হাজার ১৯৯ টাকা বাড়িয়ে দেয় বাজুস। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে স্বর্ণের দাম উঠে যায় ৮২ হাজার ৪৬৬ টাকায়।
বাজুসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন ডলার ও অন্যান্য মুদ্রার দাম নি¤œমুখী। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার ও স্থানীয় বুলিয়ন মার্কেটেও স্বর্ণের মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে।
দাম কমানোর কারণ জানতে চাইলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মুহূর্তে গোল্ডের দাম ওঠানামা করছে। এই বাড়ছে তো ওই কমছে। গত পাঁচ দিনে দাম খানিকটা কমেছে। একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দামও কিছুটা নিম্মুখী হয়েছে। সে কারণে সবকিছু হিসাব করে আমরাও গোল্ডের দাম কমিয়েছিল।
তিনি বলেন, আমরা প্রতি মুহূর্তে বাজার পর্যবেক্ষণ করি। এখন বিশ্ববাজারে দাম কমছে; আমরাও কমিয়েছি। দেশে স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমা নির্ভর করে আসলে বিশ্ববাজারের ওপর।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে গোল্ডের দাম উঠানামা করছে আসলে মার্কিন ডলারেরেউত্থান-পতনের উপর। ডলারের পাশাপাশি অন্যান্য মুদ্রার দামও উঠানামা করছে। সবকিছু মিলিয়েই আমাদের দাম নির্ধারণ করতে হচ্ছে, বলেন দেশের অন্যতম শীর্ষ স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আগারওয়ালা।
বিশ্ববাজারে বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম, ২.৬৫ ভরি) স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৮৪৩ ডলার ৪৯ সেন্ট। সর্বশেষ ২১ মে রাতে যখন স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়, তখন প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ছিল ১ হাজার ৮৪৬ ডলার ৫৩ সেন্ট।
চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এই দর কমতে কমতে ১ হাজার ৮০০ ডলারে নেমে এসেছিল। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বাড়তে বাড়তে ২ হাজার ৬০ ডলারে উঠেছিল।
শুক্রবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ কিনতে লাগবে ৭৯ হাজার ৫৪৮ টাকা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই মানের স্বর্ণ ৮৪ হাজার ৪৬৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমেছে ২ হাজার ৯১৬ টাকা।
২১ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিতে ২ হাজার ৭৯৯ টাকা কমে ৭৫ হাজার ৯৩৩ টাকা হয়েছে। গত পাঁচ দিন ৭৮ হাজার ৭৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে এই মানের স্বর্ণ।
১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৪৪৯ টাকা কমে হয়েছে ৬৫ হাজার ৮৫ টাকা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬৭ হাজার ৫৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ১ হাজার ৯৮৩ টাকা কমিয়ে ৫৪ হাজার ২৩৮ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাজুস। পাঁচ দিন ধরে ৫৬ হাজার ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি। তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের দামেই বিক্রি হবে এই ধাতু। সূত্র : নিউজবাংলা, জাগোনিউজ
