সয়াবিন তেলের দাম কমতে এক-দেড় মাস সময় লাগতে পারে : বাণিজ্যমন্ত্রী
সোহেল রহমান : আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমায় দেশের বাজারেও এর দাম কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে যেটা রিপোর্ট আছে, দাম কমেছে। তবে দামের প্রভাব দেশের বাজারে ফেলতে সময় লাগবে এক থেকে দেড় মাস।
দ্বিতীয় চা দিবস ২০২২ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমছে, ইন্দোনেশিয়াও রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেÑ এমন পরিস্থিতিতে সরকার তেলের দাম রিভিউ করবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক-দু’মাস আমরা রি-অ্যাসেস করবো। ৫-৭ দিনের মধ্যে মে মাসের পুরো তথ্য নিয়ে রিভিউ করবো। সেখানে অ্যাসেস করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হবে। আমরা ধারণা, বাড়ার সম্ভাবনা নেই। নতুন দাম অনুযায়ী দামটা কমবে। পাম অয়েলে তো যথেষ্ট প্রভাব পড়বে বলে মনে করি।
চালের দাম বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চাল মূলত কনট্রোল করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য চাইলে, সাহায্য করবো। যতটুকু জেনেছি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ৮টি টিম কাজ করছে। এসব টিম ইতিমধ্যে বেরিয়ে পড়েছে, জানার জন্য এবং কতটুকু স্টক আছে, তা বের করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, যে কোনো কিছুর সুফল পেতে হলে সময় দিতে হয়। আশা করছি, এ সপ্তাহের মধ্যে তারা আরও ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে। আমাদের দেশে চালের অভাব নেই, যা দরকার তা আছে। কোথাও কোথাও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টা হচ্ছে। যে চালটা ৫০ টাকা, সেটি শুধুমাত্র প্যাকেট করে ৭০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি করছে। একই চাল খোলাবাজারে ক্রেতা কম দামে কিনতে পারেন। নিশ্চয়ই তারা কাস্টমার পাচ্ছেন বলেই বিক্রি করতে পারছেন। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তারা আজকে প্যাকেটজাত খাবার খাচ্ছেন। না হলে একই চাল বাজারে কম দামেও পাওয়া যাচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেখতে হবে উৎপাদন খরচ, প্রফিট, মার্জিন কতটা থাকা উচিত। সামঞ্জস্যপূর্ণ দামের ক্ষেত্রে যেন কোনোভাবে বড় ধরনের পার্থক্য না থাকে। এটা দেখার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে সাহায্য চাইবে, আমরা সাহায্য করবো।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। সাধারণ মানুষ এখন মোটা চাল খেতে চায় না। মোটা চালের ক্রেতা নেই। মোটা চাল চিকন করা হচ্ছে। সেই চাল বেশি টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছেন তারা। আমি বলি না যে, ১৭ কোটি মানুষের পয়সা বেশি হয়েছে। দেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৩ কোটি মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে।
বাস্তবতা হলো, দেশের ২০ ভাগ মানুষের লো ইন্কাম (নি¤œআয়), সেটাকে মাথায় রাখতে হবে। অন্যদিকে ১৭ কোটি থেকে ৩ কোটি বাদ দিলে যে ১৪ কোটি থাকে, তাদের মধ্যে সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা পশ্চিমা বিশ্ব তথা ইউরোপের মতো। এমতাবস্থায় দরিদ্র শ্রেণির ৩ কোটি মানুষকে অ্যাডজাস্ট করা দরকার, সেটার চেষ্টাই করে যাচ্ছি। আমাদের দেখা দরকার সাধারণ মানুষ সঠিক দামে পণ্য কিনতে পারছেন কি না। ক্রয়ক্ষমতারও দুটি দিক রয়েছে, একটি হলো যারা উৎপাদনকারী ও যারা ভোক্তা। যদি এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাই যে, উৎপাদনকারী আর ইন্টারেস্ট পাচ্ছে না। তাহলে কিন্তু প্রভাব পড়বে।
বাণিজ্যমন্ত্রী, তবে নি¤œ আয়ের মানুষের স্বার্থ দেখাটাই আমাদের লক্ষ্য। যাদের টাকা আছে, তিনি কী করবেন সেটা দেখার বিষয় না। কথা হলো ন্যায্যমূল্যে যেসব পণ্য পাওয়া উচিত, সেটার দাম অবশ্যই আমরা দেখবো। খাদ্য মন্ত্রণালয় যখন আমাদের ডাকবে, তখন অবশ্যই যাবো। খাদ্যের বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কনসার্ন।