দেশের প্রথম বিট সুগার মিলের কাজ শুরু
মতিনুজ্জামান মিটু : প্রাথমিকভাবে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলায় এ বিট সুগার মিল স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মু. আব্দুস ছালাম মিলটি স্থাপন করছেন। তিনি প্রায় ৭ বছর যাবত সুগারবিট নিয়ে ইউরোপের অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছেন এবং নিজেই পঞ্চগড় জেলায় দেশের প্রথম প্রাইভেট সুগারমিল স্থাপন করছেন।
এ ধরনের একটি বিট সুগার মিল স্থাপনে খরচ হবে ৮ থেকে ১২ কোটি টাকা। এ মিল থেকে প্রায় ৪২০০ টন করে নিরাপদ চিনি, ৪২০০ টন নিরাপদ পশুখাদ্য ও ৪২০০ টন মাটির প্রাণ জৈবসার এবং প্রায় ৪০০ সিবিএম বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হবে। এছাড়া মিলটি প্রতিষ্ঠা পেলে সেখানে প্রায় ৩০০ মানুষ কাজ পাবে।
বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মু. আব্দুস ছালাম বলেন, দেশে বছরে প্রায় ২২ লাখ টন চিনি প্রয়োজন।
এর মধ্যে উৎপাদন হয় প্রায় ৬০ হাজার টন। অবশিষ্ট চিনি (হোয়াইট পয়জন) হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে আমদানি করতে হয়। সুগারমিলগুলো চালাতে সরকারকে প্রতিবছর শ শ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়। তিনি বলেন, ইউরোপ প্রায় ৮০ বছর আগে এবং পৃথিবীর অনেক দেশ অনেক বছর আগে আখ উৎপাদন বন্ধ করে সুগার বিট উৎপাদন শুরু করেছে। কারণ, আখ ১৪ মাসের ফসল এবং ১০০ কেজি আখ থেকে চিনি হয় মাত্র ৬ কেজি এবং আখের ছোবরাকে শুধুমাত্র রান্নাঘরে জ্বালানী হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। অপরদিকে, সুগারবিট মাত্র ৫ মাসের ফসল এবং ১০০ কেজি সুগারবিট থেকে চিনি পাওয়া যায় প্রায় ১৪ কেজি। সুগারবিট থেকে রস নেওয়ার পর, পাল্প উৎকৃষ্ট পশুখাদ্য। এর ডগা-পাতা বায়োগ্যাস চেম্বারে ফেললে বায়োগ্যাস এবং জৈবসার পাওয়া যাবে।
এদেশে ২০১৬ সালে সুগারবিট চাষ শুরু হয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ লাখ হেক্টর জমি সুগারবিট চাষের আওতায় আনার আশা করা হয়েছে। দেশের চরাঞ্চলে, লোনাঞ্চলে, খারাঞ্চলে, অনুর্বর এবং পতিত জমিতে সুগারবিট উৎপাদন করে প্রায় ২৩ লাখ টন চিনি, ২৩ লাখ টন পশুখাদ্য, ২৩ লাখ টন জৈবসার এবং হাজার হাজার সিবিএম বায়োগ্যাস উৎপাদন করা যাবে।
মু. আব্দুস ছালাম দেশের তরুণ আগ্রহী উদ্যোক্তাদের উপজেলা পর্যায়ে এক বা একাধিক বিট সুগারমিল স্থাপনের আহবান জানিয়ে বলেন, ইচ্ছা করলেই নিজেদের চিনির চাহিদা মিটিয়ে খুব শীঘ্রই দেশ রপ্তানি করতে পারবে। তিনি আরও বলেন যে, এ শিল্পখাতটি হবে পরিবেশ-বান্ধব। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবেশবান্ধব কৃষি, খাদ্য এবং শিল্প বিষয়ক ফান্ড থেকে অর্থ বা ঋণ পাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে।