সপ্তাহ ব্যাবধানে রসুন মরিচ ও ডালের দাম বৃদ্ধি দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম হতাশায় ক্রেতারা
মাসুদ মিয়া : রাজধানীসহ দেশজুড়ে বাজারগুলোতে দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম হতাশা বাড়ছে ক্রেতাদের মধ্যে। সপ্তাহ ব্যাবধানে আরেক দফা বেড়েছে রসুনের দাম পাশাপাশি ডাল ও শুকনো মরিচ দাম বেড়েছে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আমদানি করা এক কেজি রসুন কিনতে এখন ক্রেতাদের দুইশো টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। রসুনের বাড়লেও কিছুটা কমেছে পেঁয়াজের দাম।
এদিকে দেশে এখন চলছে বোরো ধানের ভরা মৌসুম। প্রতিবছর এসময় চালের দাম কমতির দিকে থাকে। কিন্তু এবার চিত্র উল্টো। ভরা মৌসুম হলেও রাজধানীর বাজারে প্রতিদিন দু-এক টাকা বাড়ছে চালের দাম। একই অবস্থা গ্রামগঞ্জের বাজারেও। দেশের অন্যতম চালের মোকাম নওগাঁ, কুষ্টিয়ার খাজানগর, দিনাজপুর ও ঢাকার পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে চালের দামের এ চিত্র সম্পর্কে জানা যায়।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭২ টাকায়। ভালো মানের সরু (নাজিরশাইল ও জিরাশাইল) চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। দেশি ভালো মানের ডাল কেজি ১৪০ টাকা, কয়েক দিন আগেও ছিলো ১৩০ টাকা, আটার কেজি ৫৫ টাকা, সপ্তাহখানেক আগে ছিলো ৪৫ টাকা, কয়েকদিন আগে শুকনা মরিচ ছিলো কেজি ২৭০ টাকা, ৩৫০ টাকা।
এদিকে ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন নিত্যপণ্যের দাম শুধু বেড়েই চলছে।
উচ্চবিত্তের আয় লাগামহীন বাড়লেও মধ্যবিত্তের আয় কিন্তু বাড়েনি এক টাকাও। জীবেনযাত্রা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবধরনের সবজি। সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে পাকা টমেটো ও গাজরের দাম। তবে বেগুন, বরবটি দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে। আর আগের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। সপ্তাহের ব্যবধানে বেশিরভাগ মাছের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও ইলিশের দাম কিছুটা বেড়েছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি করছেন ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, যা তিন সপ্তাহ আগে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। আর দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা তিন সপ্তাহ আগে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
রসুনের এমন দাম বাড়ার বিষয়ে রোকনপুরের ব্যবসায়ী নাজমুল বলেন, রসুনের বাজার খুব গরম। হুটহাট দাম বাড়ছে। গত সপ্তাহে এক কেজি আমদানি করা রসুন ১৬০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন আমাদের কিনতে হচ্ছে ১৭০ টাকার ওপরে। এ রসুন ১৯০ টাকার নিচে বিক্রি করার সুযোগ নেই।
কারওয়ানবাজারে ব্যবসায়ী কাজল বলেন, বাজারে এখন দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের রসুনের সরবরাহ কম। আবার আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এ কারণেই রসুনের এমন দাম বেড়েছে। তবে আমাদের ধারণা কয়েকদিনের মধ্যে রসুনের দাম কিছুটা কমে যাবে।
রসুনের দাম বাড়লেও সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। যা এক সপ্তাহে আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে সাদ্দাম বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম অনেক কমেছে। আবার আমাদের দেশেও পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে ভালো মানের পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এ কারণে পেঁয়াজের দাম এখন একটু কমতির দিকে। এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের মতো সব থেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন গাজর। ব্যবসায়ীরা এক কেজি গাজর বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।
গাজরের পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে পাকা টমেটোর দাম। এক কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
গাজর ও টমেটোর দামের বিষয়ে ব্যবসায়ী সাদ্দাম বলেন, এখন গাজর ও টমেটোর সিজন না। আগে মজুত করে রাখা কিছু গাজর, টমেটো এখন পাওয়া যাচ্ছে। এর সরবরাহ অনেক কম। এ কারণে দাম বাড়তি। সামনে টমেটোর কেজি একশো টাকা হয়ে যেতে পারে।
গাজর ও টমেটোর দাম বাড়লেও সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজির দাম কমেছে। গত সপ্তাহে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম কমে এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে করলা।
কাঁচা পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কাঁচ কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ব্যবসায়ীরা বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। আর সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩১০ টাকা।
ঈদের আগে কেজি ৭০০ টাকা উঠে যাওয়া গরুর মাংসের দামেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা বিক্রি করছেন। তবে মহল্লার সাপ্তাহিক ব্যবসায়ীরা গরুর মাংসের কেজি বিক্রি করছেন ৭২০ টাকা কেজি।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৬০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। কৈ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামে পরিবর্তন আসেনি।
তবে ইলিশ মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা। ৬০০-৭০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। চিংড়ি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে বারোশো টাকা পর্যন্ত।