মানুষের আয় বাড়ায় চা খাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে : বাণিজ্যমন্ত্রী
মো. আখতারুজ্জামান : বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আর মাত্র ২০ দিন পর আমরা স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। চট্টগ্রামবাসী তাকিয়ে রয়েছে টানেল উদ্বোধনের দিকে। আমাদের দেশের উন্নয়নের ধারা চলমান রয়েছে। এরপরও বকাউল্লাহরা বকেই যাবেন, সমালোচনা করেই যাবেন। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গড়ায় বিশ্বাসী, তিনি গড়েই যাবেন, উন্নয়ন করেই যাবেন।
শনিবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে ২য় জাতীয় চা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ চা বোর্ড এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম, বাংলাদেশ চা সংসদের চেয়ারম্যান এম শাহ আলম এবং টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ওমর হান্নান। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চায়ের উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে আমরা চিন্তা করি। প্রতি বছর ৪ থেকে ৫ শতাংশ চা উৎপাদন বাড়ছে। তবে মানুষের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম এজন্য রপ্তানি করতে পারছি না। গ্রামের মানুষেরা এখন সকালে উঠেই দোকানে চা খান। এতে বোঝা যায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। তিনি বলেন, উত্তর এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর নিজের ভাবনা থেকে চায়ের চাষ শুরু হয়। আজ অভ্যন্তরীণ চাহিদার ১৫ শতাংশ আসছে। চা পাতার কারণে আজ উত্তর এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। টিসিবির লাইনে এখন উত্তর এলাকায় মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না। চা বাগানে কাজ করার কারণে তাদের আয় আরও অনেক বেড়ে গেছে।
টিপু মুনশি বলেন, ক্ষুদ্র চা বাগানগুলোকে সাপোর্ট দিতে হবে। সার্বিকভাবে আমাদের সবাইকে নিয়ে এগুতে হবে। এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি শ্রমিক আছে তাদের সন্তানদের ট্রেনিং করে দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়টি দেখতে হবে। আমাদের কিছু চা পাতা আছে যেগুলো ইংল্যান্ডের বাজারে পাওয়া যায়। মানুষের আয় বাড়ছে, এতে আগে যে এক কাপ চা খেতো এখন সে দুই কাপ চা খাবেন। এখন দেশে দিনে ১০ কোটি কাপ চা খাওয়া হয়। চা মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, চা বাগানে ভালো মানের রিসোর্ট তৈরি হচ্ছে। এগুলো ব্যবসার জন্য ভালো। ক্রেতাকে রিসোর্টে রেখে এক বেলা খাওয়ালে, কারখানাগুলোর পরিবেশ দেখালে লোকসান নেই। এতে ক্রেতারা খুশি হয় ও নিজ পণ্যের ব্র্যান্ডিং হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, অনাবাদি ও ক্ষুদ্রাকার জমিতে চা উৎপাদন এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
আমাদের চা শিল্পের উন্নয়নে ৯০ ভাগ অবদান শ্রমিকদের। আমরা শ্রমিকদের আরও ট্রেনিং দিয়ে তাদের দেশের বাইরে পাঠাতে উদ্যোগ নিতে চাই। এতে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। চা শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী যা দিয়েছেন এর কারণে চা শিল্প অনেক এগিয়েছে। নারী চা শ্রমিকের সরকারি সহযোগিতায় নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, চা শিল্পকে এ গিয়ে নিতে আমাদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। বর্তমানে সমতলে ছোট ছোট অনেক বাগান হয়েছে। এটাকে আরও এগিয়ে নিতে হলে আমাদের কিছু প্রণোদনা দিতে হবে। সেই সঙ্গে ছোট ছোট যে বাগানগুলো রয়েছে তাদের কমপক্ষে একজন করে হলেও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। উত্তরাঞ্চলের বাগানগুলোতে এখন যে সমস্যা চলতে সেটার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পাতা সংগ্রহের পদ্ধতি। এখন তারা কাস্তে দিয়ে পাতা কেটে থাকে। যা ভালোমানের চা পাতা সংগ্রহে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদেরকে যদি কাটিং মেশিন কম দামে বা ফ্রিতে দেয়া প্রয়োজন। উত্তরের বড় সমস্যা হচ্ছে কর্মসংস্থান। চা বাগানগুলো এখন কর্মসংস্থানের বড় হাব হয়েছে। এখন আমাদের উচিৎ চা বাগান মালিকদের একটু সহযোগিতা করা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমরা এখনও ভালো প্রশিক্ষিত শ্রমিক তৈরিতে পিছিয়ে রয়েছি। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন খাতে কয়েক লক্ষ বিদেশি শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। আমাদের এই জায়গা করতে হবে। উত্তরাঞ্চল চায়ে ভালো করছে জানিয়ে তিনি বলেন, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে উত্তরাঞ্চল জাতীয় চা উৎপাদনের বড় একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে বছরে ১৪ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হচ্ছে এই এলাকা থেকে।
কান্তি ঘোষ বলেন, পঞ্চগড়ের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটিয়েছে চা শিল্প। আগে যেখানে মানুষজন কর্ম পেত না এখন সেখানে প্রতিদিন ৫০০-৭০০ টাকা মজুরিতে কাজ করছে। ব্যক্তি মালিকাধিন এসব চায়ের বাগানে এখন হাজার হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে। এদেরকে সরকারিভাবে আরও বেশি সহযোগিতা করতে হবে। যাকে করে অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত থাকে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের জিডিপির সাইজ এখন ৪১৬ বিলিয়ন ডলারের। সারাবিশ্বে ফরেন কারেন্সি সংকট রয়েছে। করেনার সময়েও সংকট ছিল। সে অবস্থার মধ্যেও আমরা ভালো করেছি। চা শিল্প আমাদের লক্ষ্যকে আরও এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে।
দেশের চা শিল্পের উন্নয়নে ৪ শতাংশ হারে ঋণের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ চা সংসদের চেয়ারম্যান এম শাহ আলম বলেন, চা শিল্প শুধু ব্যবসায়ী খাতই নয় এখানে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের জীবন মান উন্নয়নেরও বড় মাধ্যম। এই শিল্প যত উন্নয়ন হবে প্রত্যন্ত এলাকার শ্রমজীবী মানুষের জীবন মান ততো উন্নত হবে।
তিনি বলেন, রাজধানীর মতিঝিলে চা বোর্ডের যে জমি রয়েছে সেটাতে বহুতল ভবন করে চা বোর্ড তার বড় আয়ের উৎস তৈরি করতে পারে। এখানে বহুত ভবন নির্মাণ হলে একদিকে যেমন চা বোর্ডের আয় বাড়বে, অন্যদিকে এই আয় দিয়ে চা শিল্পের উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবে।
বর্তমানে চা বাগানের মোট শ্রমিকের সংখ্যা এক লাখ ৪৩ হাজার ৯৭ জন আর মোট ক্ষুদ্রায়তন চা চাষির সংখ্যা প্রায় আট হাজার জন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স, সাইপ্রাস, ব্রুনাই, গ্রিস, চীন, জাপানসহ ২৩ দেশে চা পাতা রপ্তানি হচ্ছে।
চায়ের ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ, রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ, গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদন বৃদ্ধি, চা-শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার উন্নয়নের পথনকশা: বাংলাদেশ চা শিল্প’ প্রণয়ন করেছে। এ পথনকশা ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এতে স্বল্পমেয়াদী (২০১৬-২০২০) মধ্যমেয়াদী (২০১৬-২০২৫) এবং দীর্ঘমেয়াদি (২০১৬-২০৩০) মোট ১১ কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। পথনকশায় ২০২৫ সাল নাগাদ ১৪০ মিলিয়ন কেজি চা-উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।