৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বীমা শিল্প
প্রিয়াংকা আচার্য্য : বর্তমান বিশ্ব চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে দ্বারপ্রান্তে। দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন, বিপণন ও ভোগের ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতেও প্রচলিত লেনদেন ব্যবস্থায় প্রযুক্তির হাত ধরে পরিবর্তন চলছে সমানতালে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল পেমেন্ট এখন সর্বত্র হচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মানুষের চিন্তা জগতে পণ্য উৎপাদন ও সেবা প্রদানে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।
আর প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে দেশের বীমা খাত নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম।
জীবন বীমা কর্পোরেশনের আয়োজনে রোববার রাজধানীর মতিঝিলে জীবন বীমার হেড অফিসের সভাকক্ষে ‘৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বীমা শিল্পের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারের মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মাহফুজুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব এবং জীবন বীমা কর্পোরেশনের পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আসাদুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. নাহিদ হোসেন, (আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ)। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় এবং রিজিওনাল অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ।
অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই কর্মশালার মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করেছি ৪র্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে সবাইকে প্রাথমিক একটা ধারণা দেয়ার। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টি সুন্দরভাবে আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। তিনি আগে বলতেন- ডিজিটাল বাংলাদেশ, এখন বলছেন- স্মার্ট বাংলাদেশ। অর্থাৎ ডিজিটাল ভার্সনের পরের ভার্সন, যেটাকে বলা হচ্ছে মেটা ভার্সন। এর মানে বাংলাদেশকে আরও স্মার্ট হতে হবে।’
‘আর সেই বাংলাদেশকে স্মার্ট হতে হলে আমাদের জীবন বীমা কর্পোরেশনকেও স্মার্ট হতে হবে। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, যে বাংলাদেশে প্রথম যে অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কম্পিউটার দেয়া তার মধ্যে একটি ছিল জীবন বীমায়। অর্থাৎ শুরু থেকেই সরকার ডাটা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য জীবন বীমাকে গুরুত্ব দিয়েছে।’
‘জীবন বীমা কর্পোরেশনও ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে। এখন গ্রাহকরা বিকাশ, নগদ এর মাধ্যমে ঘরে বসেই প্রিমিয়ামের টাকা জমা দিতে পারেন। আমাদের ওয়ার্ক ফোর্সও সেভাবে সাজানোর চেষ্টা করছি। আগামী বছর আমাদের প্রতিষ্ঠানের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব হতে চলেছে। আশা করি আমরা সেবাগ্রহীতাদের জন্য আরও ভালো কিছু করতে পারবো।’
যুগ্ম সচিব ড. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘৪র্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা একটি নতুন সমাজ ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে যাচ্ছি। আমাদের একটি প্রধান দুর্বলতা হচ্ছে পর্যাপ্ত ডাটার অভাব। আমাদের কোনও রিয়েল টাইম ডাটা নেই। সম্প্রতি জীবন বীমা ও গ্রীন ডেল্টার একটি কাজ করতে গিয়ে আমরা এ অসুবিধাটায় পড়েছিলাম।’
‘আপনারা জানেন, ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে বড় একটি ব্যাপার হচ্ছে প্রাইসিং। অর্থাৎ ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়ামটি কত হবে। এটি ঠিক করতে গিয়ে আমরা দেখলাম যে আমাদের হাতে পর্যাপ্ত ডাটা নেই। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো সমসাময়িক ডাটা সংগ্রহে সবসময় আপটুডেট থাকে।’
‘আমাদেরও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে ইন্সুরেন্স খাতকে ডাটাসমৃদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি বীমা খাতকে আধুনিকায়ন করতে হবে। সাধারণ মানুষ যেন ঘরে বসেই প্রযুক্তির ব্যবহার করে বীমা খাতের সেবা নিতে পারে।’