পাঁচ বছরে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায়ে ব্যয় হবে ৭১৭ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গার টোল আদায়ের কাজ পাচ্ছে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন (কেইসি)। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে পাঁচ বছর মেয়াদে নিয়োগ পাচ্ছে কোম্পানিটি। ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ এতে মোট ব্যয় হবে ৭১৭ কোটি ৪ লাখ টাকা। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আগামী বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
সূত্রমতে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে-তে টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনা, এই এক্সপ্রেসওয়েতে দেশের প্রথম ‘ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম’ (আইটিএস) পরিচালনা এবং এক্সপ্রেসওয়ের সামগ্রিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোন প্রতিষ্ঠান দেশে নেই। সে কারণে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের টোল সুচারুভাবে আদায়ের লক্ষ্যে গত ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ‘কেইসি’ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়। টোল আদায়ে সার্ভিস প্রোভাইডার নিয়োগে প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছে ৭৩২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রস্তাবিত দর প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ কম। সার্ভিস প্রোভাইডারের প্রস্তাবিত দরের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রায় ২ কোটি ৭৮ লাখ ১৫ হাজার ২২৮ ডলার এবং দেশিয় মুদ্রায় ৪৭৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ আয়কর বাবদ ১২৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাবদ ৯৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা রয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসেই ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত হবে, যা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু একই করিডোরে অবস্থিত হওয়ায় সেতুটি উদ্বোধন হলে এই এক্সপ্রেসওয়ের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে বিদ্যমান তিনটি সেতু যথাÑ বুড়িগঙ্গা সেতু, ধলেশ^রী সেতু ও আড়িয়াল খাঁ সেতুতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হচ্ছে। একই করিডোরে অবস্থিত পদ্মা সেতুটি খুব শিগগিরই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে এবং ‘ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম’ (আইটিএস) স্থাপনসহ অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। সে প্রেক্ষিতে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েটি পদ্মা সেতুর দু’পাশে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ এক্সপ্রেসওয়ে। এই এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর-এর আওতায় ‘কোইকা’ এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রস্তাবিত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ‘কেইসি’ কর্তৃক ‘আইটিএস’ স্থাপন করা হবে এবং একই করিডোরে পদ্মা সেতুর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে ‘কেইসি’-কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় একই প্রতিষ্ঠান ‘কেইসি’ কর্তৃক ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে-তে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে একই ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ, টোল আদায়, ‘আইটিএস’ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ একটি সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজ হবে এবং এতে সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে।