মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকি বেড়ে যাওয়া ও রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা বড় চ্যালেঞ্জ : অর্থমন্ত্রী
সোহেল রহমান : অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আগামী অর্থবছরই হবে অতিমারির প্রভাব কাটিয়ে উঠার জন্য আমাদের শেষ বছর। একই সঙ্গে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আমদানি সহনীয় পর্যায়ে রাখা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা হবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস ও সারের মূল্যের সাম্প্রতিক যে গতিপ্রকৃতি তাতে ভর্তুকি ব্যয় আরও ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, যা আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যবস্থাপনায় একটি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রদত্ত কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন শীর্ষক ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতয়ি বাজেট বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, অতিমারির প্রলম্বিত প্রাদুর্ভাব কিছুটা কাটিয়ে উঠার পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আগামী বাজেটে সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র নির্ধারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির চলমান এ অস্থিরতার প্রভাব কাটিয়ে বাংলাদেশ কীভাবে আরও এগিয়ে যেতে পারেÑ সেটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মূলত বহিঃস্থ এবং কিছু অভ্যন্তরীণ কারণে সম্প্রতি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যস্ফীতির বৈশ্বিক কারণমূহের মধ্যে রয়েছে, বাণিজ্য সহযোগীদের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, টাকার অবচিতি, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ- যে বিষয়গুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
তিনি বলেন, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে অসঙ্গতি রোধের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বদ্ধপরিকর। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের মূল কৌশল হবে বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বাড়ানো।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টার ফলে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাব মোকাবেলা করে অর্থনীতি স্বাভাবিক ধারায় ফিরছে। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি এবং এর সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর দিকে তাকালে স্পষ্ট দেখা যায় যে, বাংলাদেশ কোভিড-১৯-এর অর্থনৈতিক ধাক্কা ভালোভাবে কাটিয়ে উঠেছে। আমরা বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় অনেক ভালোভাবে করোনা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি এবং আমাদের আর্থ-সামাজিক কর্মকা- স্বাভাবিক ধারায় ফিরে এসেছে। বিগত বাজেটে দেওয়া আমার ঘোষণা অনুযায়ী আমরা জীবন ও জীবিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছি। করোনা অতিমারি থেকে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অর্জনের পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হলো সফলভাবে টিকা প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারা। তবে এ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে অর্থনীতিকে অতিমারি-পূর্ব সুদৃঢ় অবস্থানে পুরোপুরি ফিরিয়ে নিয়ে উন্নয়নের গতিকে আরও বেগবান করতে চলতি অর্থবছরের ন্যায় আগামী অর্থবছরেও প্রণোদনা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে।
তিনি বলেন, তবে সংকটের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে আমাদের অগ্রাধিকারও কিছুটা পরিবর্তন হবে। অতিমারির তৃতীয় বছরে এসে আমাদের অগ্রাধিকার হবে আয়বর্ধন ও কর্মসৃজনের ধারা অব্যাহত রেখে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে টেকসই করা ও এর মাধ্যমে অর্থনীতির ভিত্তিকে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া। এজন্য আমরা প্রণোদনা কার্যক্রমগুলোর বাস্তবায়ন আগামী অর্থবছরে অব্যাহত রাখবো। পাশাপাশি, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিল্প ও সেবা খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অর্থনীতির সকল গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর যাতে অতিমারির প্রভাব সম্পূর্ণরূপে কাটিয়ে উঠতে পারে সে লক্ষ্যে সব ধরনের নীতি-সহায়তা প্রদান করবো।