হুন্ডি ঠেকাতে রেমিটেন্স প্রণোদনা বাড়ানোর সুপারিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
অর্থনীতি ডেস্ক : কয়েক মাস থেকে প্রবাসীদের আয়ে বেশ খরা যাচ্ছে। যদিও করোনার শুরু থেকে এক বছরের বেশি সময় প্রবাসীদের আয় যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ছিলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত দেশে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৯ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে যা ছিল ২২ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এই ১১ মাসে রেমিটেন্স ৩ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার কমেছে।
তবে রেমিটেন্স আয় কমার পেছনে হুন্ডির মাধ্যমকে বেশি দায়ি করা হচ্ছে। করোনার শুরুর বছরে প্রবাসীদের যাতায়ত সীমিত থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। বিশ্বব্যাপী করোনার ভাইরাসের পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় দেশে টাকা পাঠানোর অবৈধ মাধ্যম হুন্ডির কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ার ফলে ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর হার কমেছে।
যদিও অবৈধভাবে টাকা পাঠানোকে নিরুশাহিত করতে রেমিটেন্সে নগদ ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এই প্রণোদনা প্রথম দিকে ছিলো ২ শতাংশ। এখ তা বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা পাঠালে বাংলাদেশে পাবে ১০২ টাকা ৫০ পয়সা। এই নগদ প্রণোদনা আরও বাড়ানোর সুপারিশ করে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রেমিটেন্স কম আসার পেছনে হুন্ডিসহ আরও দুই কারণের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে মার্কিন ডলারের বিপরিদে টাকার মান কমা এবং করোনা মহামারীর সময়ে স্থায়ীভাবে উল্লেসংখ্যক প্রবাসীকর্মী দেশে চলে আসা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসেছে ১৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রেমিটেন্স সবচেয়ে বেশি কমেছে সৌদি আরব থেকে, যেখানে রয়েছে ২২ লাখ বাংলাদেশি।
রেমিটেন্স কম আসার তালিকায় দ্বিতীয়তে রয়েছে মালয়েশিয়া। ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে দেশটি থেকে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ ৮৪৯ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত, কাতার ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা রেমিটেন্সের প্রবাহও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রবাসীদের আয় বাড়ানোর জন্য নগদ প্রণোদনা দিয়ে আসছি। শুরুতে ২ শতাংশ ছিলো। এখন তা বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। এটাকে আরও বাড়ানোর বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। নগদ প্রণোদনার হার বাড়ানো গেলে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর হার কমে আসবে বলে আমার মনে করছি। করোনার মহামারীতে বিদেশে কর্মসংস্থান হারিয়ে আমাদের বেশ কিছু প্রবাসী স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসে। রেমিটেন্স প্রবাহ কমে আসার পেছনে এটাও একটি কারণ বলে তিনি জানান।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারা দেশে রেমিটেন্স পাঠায়, তাদেরকে বৈধ চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত করতে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডলারের বিনিময় হারের ক্ষেত্রে বৈধ ও অবৈধ চ্যানেলের মধ্যে ৬-৭ টাকার মতো পার্থক্য রয়েছে। এই ব্যবধান ২-৩ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।
সরকারি সংস্থা বিএমইটির তথ্যমতে, ২০১৭ সাল থেকে টানা ৫ বছর বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ৭ লাখ ৯৯ হাজার বাংলাদেশি কর্মী বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, মহামারির মধ্যে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে অবৈধ চ্যানেল থেকে বৈধ চ্যানেলে যাওয়াই ২০২০-২০২১ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ রেমিটেন্স বৃদ্ধির প্রধান কারণ। এ ছাড়াও মহামারিকালে অনেক বিদেশিকর্মী তাদের সব সঞ্চয় নিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। তাই অভ্যন্তরীণ রেমিটেন্স বেড়েছে।