ঢাকায় যাদের জমি বা ফ্ল্যাট আছে তারা সবাই কালো টাকার মালিক : অর্থমন্ত্রী
সোহেল রহমান : ঢাকা শহরে যেসব ব্যক্তির জায়গা-জমি বা ফ্ল্যাট আছে তারা সবাই কালো টাকার মালিক বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ অবস্থার জন্য সরকার ও আমাদের সিস্টেম দায়ী বলে মনে করেন তিনি। বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়ালি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, গুলশান এলাকায় কেনা কোনো জমির যে দাম দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়, জমির প্রকৃত দাম তারচেয়েও বেশি। কিন্তু বেশি দামে তো রেজিস্ট্রি করতে পারবেন না। প্রত্যেকটা মৌজার জন্য দাম ঠিক করে দেয়া আছে, এর বেশি দামে রেজিস্ট্রি করা যাবে না। আমিও এক সময় দায়িত্বে ছিলাম। ঢাকা শহরে জমির দাম বাড়ানো যায় কি নাÑ সেটা নিয়ে চিন্তা করলেও শেষ পর্যন্ত দাম বাড়াতে পারিনি। যে দাম ছিলো সে দামই আছে। ঢাকা শহরে যার জায়গা আছে কিংবা যে ব্যক্তি জায়গা কিনেছেন তিনিই শুধু বলতে পারবেন, কত টাকায় রেজিস্ট্রি হয়েছে এবং জায়গার প্রকৃত বাজার দর কত। অন্যদিকে যে ফ্ল্যাট ২ কোটি টাকায় রেজিস্ট্রি হচ্ছে, সেই ফ্ল্যাটের প্রকৃত দাম হয়তো ১০ কোটি টাকা। ফলে সরকার বাড়তি রেজিস্ট্রেশন ফি পাচ্ছে না। এখানেই কালো টাকার উত্থান হচ্ছে। এ বিষয়গুলো সবাইকে বুঝতে হবে। সুতরাং যেটি পারা যাবে না, কালো টাকা তো সেখানেই হয়ে আছে। কে কালো টাকার বাইরে আছে?
কালো টাকা ফেরত আনা নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে তিরি বলেন, যখন বিদেশে পাচার হওয়া কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি তখন বলা হচ্ছে, সরকার নাকি কালো টাকাকে সাদা করার প্রশ্রয় দিচ্ছে। আমি বারবার বলি অপ্রদর্শিত টাকা। এখানে লাজ-লজ্জার কিছু নাই। সরকার এজন্য দায়ী। বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে আমরা কোনো আলাপ-আলোচনা করলে সেটি বস্তুনিষ্ঠ হয়।
পাচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ বিষয়ে কোনো চাপে আছেন কি না- জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি কোনোভাবে চাপে নেই। আমি যা বলেছি, তা আমি করবো। আমি অর্ধেক রাস্তা থেকে ফিরে আসি না। আমি যখন রেমিটেন্সের ওপর প্রণোদনা দিয়েছি তখন অনেক সমালোচনা ছিলো। বলা হয়েছিল টাকা আসবে না, কিছু হবে না, টাকা পাচার হবে। কিন্তু এসেছে, শুধু আসেই-নি ঐতিহাসিক রেকর্ডও হয়েছে।
পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতি ভালোভাবে চলছে। প্রবৃদ্ধিও ভালো হচ্ছে। সারা বিশ্বে তুলনায় আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার শক্তিশালী অবস্থানে। কাজেই, পুঁজিবাজার ভালোভাবে চলবে এটা আমাদের প্রত্যাশা। এছাড়া বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হলে পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়বে এবং বাজারে চাঙাভাব বিরাজ করবে। পাশাপাশি পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আসলে সেটার একটি অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে এবং পুঁজিবাজার চাঙা হবে। আমি প্রত্যাশা করি, আগামীতে পুঁজিবাজার আরও ভালো হবে এবং ভালোভাবে চলবে। আর শুধু পুজিবাজার নয়, পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আসলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যও গতিশীল হবে। বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ হবে। এ প্রত্যাশায় আমরা সেদিকে নজর দিচ্ছি।
পুঁজিবাজারে গত সেপ্টেম্বর থেকে থেমে থেমে যে দরপতন চলছে, তাকে বাজারের স্বাভাবিক চিত্র বলে দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজার একবার উঠবে আরেকবার নামবে- এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। সে নিয়মেই দেশের পুঁজিবাজার চলছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নীতিগত সিদ্ধান্ত হলে তখন জানানো হবে।