রাশিয়া ছাড়তে চান ১৫ হাজারের বেশি ধনকুবের
অর্থনীতি ডেস্ক : ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে রাশিয়ার বিস্তৃত খাতজুড়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। এ অবস্থায় চাপে পড়েছে মস্কো। দেশটির অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচকই নি¤œমুখী হয়েছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন রুশ ধনকুবেররা। যুদ্ধের মধ্যে চলতি বছরই ১৫ হাজারের বেশি রুশ মিলিয়নেয়ার দেশ ছাড়তে পারেন। বিডি নিউজ
অভিবাসন নিয়ে কাজ করা লন্ডনভিত্তিক ফার্ম হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের তথ্য অনুসারে, ইউক্রেনে আক্রমণের পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শাসনের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ধনী নাগরিকরা। ১০ লাখ ডলারের বেশি সম্পদ থাকা প্রায় ১৫ শতাংশ রুশ ২০২২ সালের শেষ নাগাদ অন্য দেশে চলে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশ ছাড়ার এমন মনোভাব পোষণ করা রুশদের সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি।
হনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের হয়ে তথ্য সংগ্রহ করা সম্পদ গবেষণা সংস্থা নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথের গবেষণা প্রধান অ্যান্ড্রু অ্যামোইলস বলেন, ধনকুবেরদের জন্য রাশিয়া অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটিতে তারা প্রচুর সম্পদ হারাচ্ছেন। তাছাড়া বিগত এক দশক ধরেই প্রতি বছর ক্রমবর্ধমান সংখ্যক রুশ ধনীরা দেশত্যাগ করছেন। বর্তমান সংকটের প্রাথমিক সতর্কতা হিসেবে তারা এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এটা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত যে বড় অর্থনীতির পতন ধনী ব্যক্তিদের দেশত্যাগের বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করে। তাদের কাছে অনেক বিকল্প থাকায় তারা কোনো সংকটের আগ মুহূর্তে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
একই কারণে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ইউক্রেনীয় ধনকুবেররা। কারণ দেশটির ধনী ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত দেশটির ৪২ শতাংশ বা ২ হাজার ৮০০ জন মিলিয়নেয়ার চলতি বছর দেশ ছাড়তে চলেছে। বিশ্বের ধনীরা ঐতিহ্যগতভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছেন। তবে হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ধনকুবের অভিবাসীদের জন্য শীর্ষ গন্তব্য হিসেবে দেশ দুটিকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য তার সম্পদ কেন্দ্রের মুকুট হারিয়েছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রও বিশ্বের ধনীদের আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে দ্রুত বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ইউএই ধনীদের আকৃষ্ট করতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য দেশটিতে মিলিয়নেয়ারদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
প্রায় ৪ হাজার ধনকুবের চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইউএই বিশেষ করে দুবাইয়ে স্থানান্তরিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশটি অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এগিয়ে থাকবে। এ সময়ে ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশটিতে ৩ হাজার ৫০০ জন ধনকুবের স্থানান্তরিত হবেন। পাশাপাশি সিঙ্গাপুরে ২ হাজার ৮০০ জন এবং ইসরায়েলে ২ হাজার ৫০০ জন ধনকুবের আবাস গড়বেন।
এছাড়া বিপুলসংখ্যক রুশ ধনকুবের করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত মালটা, মরিশাস ও মোনাকোয় চলে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অ্যান্ড্রু অ্যামোইলস বলেন, গত এক দশকে ইউরোপের মধ্যে বড় একটি সাফল্যের গল্প লিখেছে মাল্টা। শুধু ধনকুবের স্থানান্তরেই নয়, সামগ্রিক সম্পদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও দেশটি অনেক এগিয়ে রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে মাল্টা। ২০১১-২১ সালের মধ্যে ডলারের হিসাবে দেশটির সম্পদ বেড়েছে ৮৭ শতাংশ। চলতি বছর প্রায় ৩০০ জন ধনকুবের দেশটিতে পাড়ি জমাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আবার ভারত উপসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাসকে হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স ওয়েলথ ম্যাগনেট হিসেবে বর্ণনা করেছে। উল্লেখযোগ্য কর অব্যাহতি দেশটিকে একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক কেন্দ্র তৈরি করছে। দেশটিতে কোনো মূলধন কর কিংবা উত্তরাধিকার কর নেই। পাশাপাশি দেশটিতে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ করের হার ৩ শতাংশ। এছাড়া ইউরোপের আরেক দেশ মেনাকায় বসবাসকারী ১০ জনের মধ্যে প্রায় সাতজন ১০ লাখ ডলারের বেশি সম্পদের মালিক। এ দেশটিতেও আয়কর, মূলধন বৃদ্ধির ওপর কর কিংবা সম্পত্তি কর নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী নীতিনির্ধারণ, পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে বৃহত্তর বিনিয়োগ এবং শিল্পজুড়ে সবুজ প্রযুক্তির মিশ্রণ তৈরিতে সরকারগুলোকে আর্থিক পরিষেবা ও প্রযুক্তি খাতের সঙ্গে কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, কয়লা নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে প্রতিস্থাপন হলে শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে ৭৮ লাখ কোটি ডলার যুক্ত হবে।
পাশাপাশি নিট জিরো নিঃসরণে স্থানান্তর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাঠামোয় মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। কারণ অর্থনীতি জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে হাইড্রোজেনের মতো জ্বালানি উেসর ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে।ডেলয়েট ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের অংশীদার ড. প্রদীপ ফিলিপ বলেন, আমাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে একটি নি¤œ কার্বন ভবিষ্যৎ কেবল সামাজিক দিক থেকে অপরিহার্য নয়, বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিষয়।
এরই মধ্যে আমাদের কাছে জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবেলা এবং উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সুবিধা উন্মুক্ত করতে প্রযুক্তি, ব্যবসায়িক মডেল ও নীতিপদ্ধতি রয়েছে। কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামাতে আমাদের এখন শুধু বিশ্বব্যাপী সরকার, ব্যবসা ও সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। সম্পাদনা : জেরিন মাশফিক