
কুড়িগ্রামে পানিবন্দি ২ লাখ মানুষ খাদ্য বিশুদ্ধ পানির সংকট

অর্থনীতি ডেস্ক : কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুই লাখ মানুষ। বানভাসী এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শনিবার সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ২২ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ২২ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পানির তীব্র স্রোতে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মরিয়াহাট এলাকার একটি বেড়িবাঁধের প্রায় ২০ থেকে ২২ ফুট অংশ শুক্রবার ভেঙে যায় বলে জানান তিনি।
গত তিনদিনে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কুড়িগ্রামের নয় উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের ১৫০টি গ্রামের প্রায় দুই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এবং ৬০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে হয়েছে বলে জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার জানান।
তিনি বলেন, রৌমারী, উলিপুর ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির বেশি অবনতি হয়েছে। বন্যায় জেলায় প্রায় ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বানভাসী এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্যে ও জ্বালানীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নদীভাঙন ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বানভাসী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। “এই পরিস্থিতিতে উপাজেলা প্রশাসন থেকে রৌমারীতে ৬ হাজার এবং সদর উপজেলায় প্রায় ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।” কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের এক হাজার দুইশ বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে এবং প্রায় ৬ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান।
তিনি বলেন, “যাত্রাপুরে গত ৫ দিনে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙ্ন এবং পানির তোড়ে আরাজিপাড়া, রলাকাটা ও চর যাত্রাপুরের ৬০ পরিবার বাড়িঘর হারিয়েছে।”
এদিকে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় জেলায় মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পর্যায়ে বেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আর একটি প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম জানান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, এ পরিস্থিতিতে রৌমারীতে ৪৪টি এবং কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ১১টিসহ ৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসেদুল হাসান বলেন, তারা দুর্গত এলাকা পরির্দশন করে এরই মধ্যে উদ্ধার ও শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। তাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম দুপুরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ যাত্রপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর, রলাকাটা এলাকার বন্যাদুর্গত মানুষের খোঁজখবর নেন এবং ত্রাণ বিতরণ করেন।
এদিকে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রশীদ বলছেন, দ্বিতীয় দফা বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করে কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে, যাতে বন্যা পুনর্বাসন প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় তাদেরকে সহযোগিতা করা যায়।
পাশপাশি বন্যা কবলিতদের চিকিৎসা সেবা দিতে ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে সিভিল সার্জন ডা. মো. মনজুর এ মুর্শেদ সাংবাদিকদের জানান।
বন্যায় মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে নয় উপজেলার বন্যাদুর্গত মানুষের সহায়তার জন্য ২৯৫ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ক্রয় বাবদ ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং গোখাদ্য ক্রয় বাবদ ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এসব তথ্য জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “উপজেলা পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুত করে বিতরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
“বর্তমানে ৮ লাখ টাকা এবং ৩০৮ মেট্রিকটন চাল মজুদ রয়েছে। আরও পাঁচশ মেট্রিকটন চাল, ১০ লাখ টাকা ও ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার নতুন করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।” সূত্র : বিডিনিউজ, বাংলানিউজ
