মধ্যবিত্তের সীমিত আয় রক্ষার জন্য বাজেটে কোন ব্যবস্থা নেই : ড. দেবপ্রিয়
সোহেল রহমান : এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম-এর আহবায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, মধ্যবিত্তের সীমিত নিষ্পত্তিযোগ্য আয় রক্ষা করার জন্য বাজেটে কোন ব্যবস্থা নেই। উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে এটা আরও কমছে। কর আরোপের কারণে নির্বাচিত পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
রোববার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ আয়োজিত জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ : পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী আছে শীর্ষক এক মিডিয়া ব্রিফিং-এ তিনি এসব কথা বলেন।
প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে এমন মন্তব্য করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, মধ্যবিত্ত শ্রেণী এই মূহূর্তে রাজনৈতিকভাবে প্রতিনিধিত্বহীন। অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবেও মধ্যবিত্তের অভিভাবক নেই। গত এক দশকে গড়ে উঠা মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার বিষয়ে অবহেলা করা হয়েছে। উপরন্তু, বাজেটে মধ্যবিত্তকে প্রধান কর ফাঁকিদাতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং উচ্চবিত্তের কর ফাঁকির কোন উল্লেখ নেই। অথচ এই শ্রেণীর মানুষের মেধা ও যোগ্যতাকে কতটা ব্যবহার করা হচ্ছে, তাদের প্রতি কতটা সুবিচার করা হচ্ছে Ñএর আলোচনা এই বাজেটে নেই।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, অন্যদিকে মধ্যবিত্তরা যে সমস্ত জিনিস ব্যবহার করে যেমন- স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র ও রেফ্রিজারেটর- সেগুলোর কর বাড়ানো হয়েছে। দেশের উৎপাদনকারীদের সুরক্ষা দিতে এ ধরনের শুল্ক সুরক্ষা দেয়া হলে ব্যবহারকারী মধ্যবিত্তকেও অন্যভাবে সুবিধা দেয়া উচিত ছিল। বাজেটে এর কোন প্রতিফলন নেই।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ৫৪ শতাংশ বাড়ানো হলেও এর বড় একটা অংশ চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জে। ফলে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা তেমন সুবিধা পাবেন না। সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দেও দরিদ্ররা উপেক্ষিত থাকছেন। সামাজিক নিরাপত্তায় টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও জিডিপি ও বাজেটের আকারের তুলনায় কমেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশনের বরাদ্দ বাদ দিলে সামাজিক নিরাপত্তায় প্রকৃত বরাদ্দ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ৫০০ টাকার ভাতায় একটা পরিবার বা দুঃস্থ মানুষের কিছুই হয় না। আমরা প্রতিটি সুবিধাভোগীর জন্য ১০০০ টাকা ভাতার প্রস্তাব করেছিলাম। সেটা করা হয়নি। যুবকদের ভাতাও চালু হয়নি। সাধারণভাবে ভাতাও বাড়েনি। ২০১৮ সালে জাতীয় আয়ের অংশ হিসেবে এই মানুষগুলো চার শতাংশের কম ভাতা পেতো। এখন পাচ্ছে ২.১ শতাংশ। পুরো দেশের মাথাপিছু আয় বাড়ল। তাদের কোন বরাদ্দ বাড়ল না। এই মানুষগুলোর অপরাধ কী? হয় মাথাপিছু আয় বাড়েনি, নয়তো এই মানুষগুলোকে বঞ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে খুবই সামান্য।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক সুরক্ষায় সুদ, পেনশন, প্রকল্প সহায়তাসহ এমন অনেক উপাদান আছে যেগুলোর সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যয় দেখানো সঙ্গত নয়। সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এ খাতে কোন বরাদ্দ নেই। এ লক্ষ্যে আইনেরও দরকার রয়েছে। এই আইন সামনে রেখে যে বরাদ্দ দরকার- তা চোখে পড়েনি।
অন্যান্য প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়াতে বাজেটে কোনো সুসংগত নীতির উল্লেখ করা হয়নি।