চরম খাদ্য সংকটে সিলেটের বানভাসীরা
জহিরুল ইসলাম : কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, অনেকের ঘরে কোমর থেকে গলাসমান পানি। ফলে জীবন বাঁচাতেই আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে তারা। তবে এখানে এসেও পড়েছে আরেক ভোগান্তিতে। স্থানের তুলনায় এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা বেশি। গবাদিপশু–পাখির সঙ্গে গাদাগাদি করে একই কক্ষে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিরা রাত কাটাচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। এমনকি খাবারও পাচ্ছে না অনেকে, ফলে খাবার না পেয়ে অভুক্ত অবস্থাতেই আছে তারা।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার সাদাত জানান, জেলায় মোট ৩৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০টি কেন্দ্রের আশ্রয়গ্রহণকারীদের তথ্য জেলা প্রশাসনের কাছে রয়েছে। সে হিসাবে ২০০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬ হাজার ৮৪৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে বন্যাকবলিত এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় নৌকার সংকটে এসব ত্রাণ পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে সর্বত্র ত্রাণ পাঠাতে চেষ্টা চলছে। বন্যা ভয়াবহ রূপ নেওযায় এবার একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এটিএম বুথভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা। এটিএম বুথ তলিয়ে যাওয়ায় এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। আবার অনেক স্থানে ব্যাংকের কার্যালয়ও ডুবে গেছে।
বন্যাদুর্গত এলাকাবাসীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। বিপদগ্রস্ত মানুষদের উদ্ধার করতে সেনাবাহিনীর টিম কাজ করছে। উপজেলা সবকটি ইউনিয়নের বন্যাদুর্গতরা আশ্রয়কেন্দ্র, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দু’তলা বাড়ির ছাদ, এবং গাছে আশ্রয় নিয়েছেন।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, বিগত বছরে জুন মাসের বৃষ্টিপাত রেকর্ডের তুলনায় চলতি বছর জুন মাসে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বিগত বছরে গড় হিসেবে জুন মাসে ৮১৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর জুন মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত ১ হাজার ২২৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ২০০৬ সালে জুন মাসে ১ হাজার ২৪৪ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
শনিবার রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় রোববার সকালে সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমতে দেখা গেছে। কিছু জায়গায় পানি ১ থেকে দেড় হাত কমেছে।
সোমবার থেকে আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে আসবে। বৃষ্টিপাতও তুলনামূলক কমে যাবে। সেই সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী।