
এবার আমের ফলন কম, দামে রেকর্ড

অর্থনীতি ডেস্ক : কম শীত ও অতি খরায় রাজশাহীতে আমের ফলন কমেছে এবার। বৃষ্টি কম হওয়ায় আকারেও হয়েছে ছোট।
তাই দামের দিক থেকে গেল কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এতে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটলেও মন খারাপ ক্রেতাদের।
আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমের সরবরাহ খুবই কম। প্রতি বছর মৌসুমের শুরুতে রাজশাহীর হাট-বাজার ও পথ-ঘাট আমে ভরপুর হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার আমময় রাজশাহীর সেই চিরচেনা দৃশ্যপট নেই! এখনও যেন সব ফাঁকা ফাঁকাই।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট রয়েছে- পুঠিয়ার বানেশ্বরে। ওই হাটে গিয়ে দেখা যায়- শহরের চাইতে সেখানো পাইকারি হিসেবে মণপ্রতি আমের দাম ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কম। তবে এখানকার আম অনেকটা মিশালি। দেখা গেছে জাত আম গোপালভোগের সঙ্গে টক-মিষ্টি স্বাদের গুটিজাতের আম মিশ রয়েছে। আবার ক্যারেটের ওপড়ে বড় আম কিন্তু ভেতরে ছোট আম। এছাড়া বনেদি জাতের আমও মেশানো থাকছে কোনো কোনো আড়ত এবং কৃষকের ভ্যানে। তাই শহরের তুলনায় দাম একটু কম হলেও পরখ করে কিনতে না জানলে ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
বানেশ্বর হাট ঘুরে দেখা গেছে, এরই মধ্যে গুটি, গোপালভোগ ও ক্ষিরসাপাত আম বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখন নামার অপেক্ষায় রয়েছে রাণিপছন্দ আম। আমের সরবরাহ এখনও কম। বাড়লে বেচাকেনাও পুরোদমে জমে উঠবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
গেল কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে এবারও আম পাড়ার সময় বেঁধে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। গত ১৩ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম পাড়া শুরু হয়। এরপর ২০ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে ল²ণভোগ ও রানীপছন্দ নামানো হচ্ছে। এছাড়া ক্ষিরসাপাত বা হিমসাগর নামতে শুরু করেছে ২৮ মে থেকে। ল্যাংড়া আম নামবে ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি আম ১৫ জুন, আশ্বিনা ও বারী আম-৪ ১০ জুলাই, গৌড়মতি ১৫ জুলাই এবং সবার শেষে নতুন জাতের ইলামতি ২০ আগস্ট থেকে ভাঙ্গা শুরু হবে।
দেখা গেছে- গেল বছর যেই গুটি আম ১ হাজার ২০০ টাকা ছিল এবার সেই আম হাটেই উঠেছে ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে। যেই গোপালভোগ আম গত বছর শুরুতে ১ হাজার ৫০০ টাকা ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ ছিল সেই আম এবার শুরুতেই ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ২ হাজর ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। আর কেবলই উঠেছে ক্ষিরপসাপাত আম। এই আম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ। অথচ গত বছর মৌসুমের শুরুতে ক্ষিরসাপাত আম বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে।
এছাড়া হাটে প্রতিমণ ল²ণভোগ আম ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং তোতাপুরি, আধাসুন্দরী, রতœাসহ আঁটি আমগুলো ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ সব আমেরই দাম বেশি। পুরিয়ার বানেশ্বর আম ব্যবসায়ী হোসেন আলী বলেন, গেল বছরও আমের বাম্পার ফলন হয়েছিল রাজশাহীতে। তবে করোনার ছোবলে দাম পায়নি কৃষক। এবার শুরু থেকেই শীত পড়েছে কম। এর ওপর দীর্ঘায়িত হয়েছে খরা। ফলে শুরুতেই আমের মুকুল গাছে টেকেনি। পরে গুটি বাঁধলেও খরায় গাছ থেকে পানির অভাবে আমের গুটিও ঝরেছে। এরপর টানা তাপদাহে আমের আকার ছোট হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে ফলন কমায় সরবরাহ কমেছে। দামও চড়েছে।
এদিকে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলিম বলেন, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে রাজশাহীতে এবার আমের ফলন কম হয়েছে। তবে এই কম ফলনেও রাজশাহীসহ গোটা দেশের চাহিদা পূরণ সম্ভব। আর এবার দাম বেশি হওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষকরাও একটু লাভবান হবেন। গেল দুই বছর করোনার কারণে আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার তাদের সেই ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।
রাজশাহী কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন জানান, গেল বছর ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১৭ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে এই উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এবার রাজশাহীতে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে থাকা বাগান থেকে ২ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাপদাহসহ নানা কারণে গাছে ফলন কম হলেও সমস্যা হবে না। ঝড়-ঝঞ্ঝা ও শিলাবৃষ্টির কবলে না পড়লে এই আম দিয়েই গোটা দেশের চাহিদা পূরণ সম্ভব। সূত্র : বাংলানিউজ
