নাশপাতির বাণিজ্যিক চাষের জন্য উপযুক্ত দেশের মাটি
মতিনুজ্জামান মিটু : দেশের বরেন্দ্র ও পাহাড়ি অঞ্চলে এফল চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি’র উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্রের ফল বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন জানান, নাশপাতির চাহিদা বিবেচনায় ২০০৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি নাশপাতি-১ নামে একটি জাত অবমুক্ত করে। বারি’র মৌলভীবাজারের আকবরপুরের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে ২০১০ সালে জাতাটির একটি মাতৃবাগান স্থাপন করা হয়। জাতটি নিয়মিত ফলদানকারী ও উচ্চফলনশীল। নাশপাতির গাছ খাঁড়া ও অল্প ঝোপাল।
এজাতটি’র চাষ স¤প্রসারণে একেন্দ্র হতে প্রতি বছর গড়ে ২০০টি করে কলম সরবরাহ করা হয়। চৈত্র মাসে ফুল আসে এবং শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ফল সংগ্রহ উপযোগী হয়। ফলের গড় ওজন ১৩৫ গ্রাম, দৈর্ঘ্য ৮.৪০ সেন্টিমিটার প্রস্থ ৫.৬৩ সেন্টিমিটার। ফল বাদামি রঙের, ফলের উপরিভাগের ত্বক সামান্য খসখসে। শাঁস সাদাটে, খেতে কচকচে ও সুস্বাদু এবং ব্রিক্সমান ১০শতাংশ। তবে একেন্দ্রটিতে ব্রিক্সমান ১২শতাংশ পর্যন্ত পাওয়া যায়। যা বিদেশ থেকে আমদানিকরা নাশপাতির চেয়ে অনেক সুস্বাদু। গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০টি।
জাতটি চট্টগ্রাম, পার্বত্য জেলাগুলোতে ও সিলেট অঞ্চলে চাষ উপযোগী। যে কোন ধরনের সুনিষ্কাশিত মাটিতে নাশপাতি চাষ করা যায়। তবে উর্বর সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ মাটি উত্তম। নাশপাতি চাষের জন্য সূর্যালোক দরকার। শুষ্ক গরম বায়ু নাশপাতির জন্য ক্ষতিকর। মাটির পিএইচ মান ৫.৫ থেকে ৭.৫ উত্তম। তবে এর চেয়ে কম বা বেশি হলেও নাশপাতি জন্মাতে ও ফলন দিতে পারে। নাশপাতি গাছ লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে না। সাধারণত স্টেম কাটিং বা শাখা কর্তন এবং গুটি কলমের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। বর্ষাকাল কলম করার উপযুক্ত সময়।
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে তিনি আরও জানান, পূর্ব এশিয়ার নাশপাতি গাছের একটি প্রজাতি এশিয়ান নাশপাতি নামে বেশি পরিচিত। সারা পৃথিবীতে নাশপাতির অনেক প্রজাতি রয়েছে। এগুলো হলো এশিয়ান নাশপাতি, জাপানিজ নাশপাতি, চীনা নাশপাতি, কোরিয়ান নাশপাতি, তাইওয়ানের নাশপাতি, আপেল নাশপাতি, প্যাপেল নাশপাতি এবং বালি নাশপাতি। নাশপাতি মূলত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল। তবে এগুলোর মধ্যে এশিয়ান নাশপাতি অপেক্ষাকৃত উচ্চতাপমাত্রায় জন্মাতে ও ফলন দিতে পারে। এটি একটি বিদেশী ফল হলেও এদেশে কম বেশি সবাই ফলটির সঙ্গে পরিচিত। ড. মো. শরফ উদ্দিন জানান, আমদানিকরা নাশপাতিগুলো কখনও স্বাদে মিষ্টি, কখনও কিছুটা পানসে প্রকৃতির হয়ে থাকে। তারপরও প্রতি বছর বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে এফলটি আমদানি করতে হয়। নাশপাতি একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। এ ফলে শর্করা, ক্যালরি, চিনি, বিভিন্ন ডায়েটারি ফাইবার, চর্বি, প্রোটিন, বিভিন্ন ধরনের দরকারি ভিটামিনস এবং খনিজ থাকে।
নাশপাতি গাছের ডালপালা বেশ লম্বা প্রকৃতির হয়ে থাকে। লাইন হতে লাইনের দূরত্ব ৫ মিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫ মিটার হলে ভালো হয়। চারা কলম লাগানোর কমপক্ষে ১৫ দিন আগে গর্ত ভালোভাবে তৈরি করতে হবে এবং গর্তের মধ্যে ১০ কেজি পচা গোবর সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি সার দিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে।
কলমের চারা লাগানোর আগে গর্তের মাটি ভালোভাবে ওলট-পালট করে গর্তের মাঝখানে চারা রোপণ করতে হবে। এরপর একটি খুটির মাধ্যমে চারাটি সোজা করতে হবে। লাগানোর প্রথম কয়েক দিন নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। গাছের আকার ছোট রাখার জন্য গাছের উচ্চতা ৪০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার হলে ভেঙে বা ছেটে দিতে হবে। নাশপাতির খাঁড়া ডালে নতুন শাখা-প্রশাখা কম হয়। এ জন্য খাঁড়া ডালে ওজন বা টানার সাহায্যে নুয়ে দিলে প্রচুর সংখ্যক নতুন শাখা গজায়। এতে ফলন ও ফলের গুণগতমান বাড়ে। এরপর পৃষ্ঠা ৭, সারি ৩