সর্বাধুনিক কাজু ও কফি কারখানা হচ্ছে পঞ্চগড়ে
মতিনুজ্জামান মিটু: ক্যাশো গ্রোয়ার্স প্রোসেসর্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এ্যসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ’র প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশ ক্যাশো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মু. আব্দুস ছালাম প্রায় ২ একর জমির উপর দেশের সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধুনিক কাজুবাদাম এবং কফি কারখানা স্থাপন করছেন। একারখানাটি প্রতিষ্ঠা পেলে বছরে প্রায় ৩০০০ টন ’র’ কাজু নাট প্রোসেস হয়ে প্রায় ৭৫০ টন কাজু দানা বা কার্নেল বের হবে। যার রপ্তানি মূল্য হবে প্রায় ৫ কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫২ কোটি টাকা। অপরদিকে, কাজুবাদাম উৎপাদন এবং প্রোসেস করলে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য পাওয়া যাবে।
এপণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে: কাজু জুস, সিএনএসএল ও জৈবসার। কাজু জুস : কাজুবাদামের মাথায় কাজু আপেল হয়। এ আপেলে প্রায় ৮০ শতাংশ জুস থাকে যা অনেক ঔষধিগুণ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং কমলা লেবুর চেয়ে ৮ গুন বেশী ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। সিএনএসএল: কাজুবাদামের শেল বা খোশা থেকে উৎপাদিত তেল দিয়ে উৎকৃষ্টমানের পেস্টিসাইড বা কীটনাশক উৎপাদন করা যাবে। যা নিরাপদ ফসল এবং খাদ্য উৎপাদনে অত্যন্ত জরুরী। অপরদিকে, মানবদেহ এবং পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকারক রাসায়নিক কীটনাশক আমদানী প্রতিহত করে বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় করবে। জৈবসার : কাজু আপেল থেকে জুস বের করে নেয়ার পর মন্ড বা ছোবরা দিয়ে মাটির প্রাণ উত্তম জৈবসার উৎপন্ন হবে। ঠিক একইভাবে শেল বা খোশা থেকেও তেল বের করে নেওয়ার পর যে খৈল হবে তা দিয়েও জৈবসার হবে।
বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি মু. আব্দুস ছালাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ২০১২ সালে আধুনিক পদ্ধতিতে বড়জাতের কাজুবাদাম চাষ বা উৎপাদন করার লক্ষ্যে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলার কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন।
তার আত্মবিশ্বাস এবং কল্পনাতীত পরিশ্রমের ফলে দেশে কাজুবাদাম ও কফি খাত ২টি সবচেয়ে বড় এবং লাভজনক বাণিজ্যিক খাতে পরিণত হতে যাচ্ছে। এ কারণে, অনেকে মু. আব্দুস ছালামকে বাংলাদেশে কাজুবাদামের জনক বলে থাকেন। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে অনেক বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখন কাজু কফি ব্যবসায় আসছে।
পার্বত্য জেলাগুলোতে কিছু সমস্যার কারণে মু. আব্দুস ছালাম এখন টাঙ্গাইল, শেরপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, সিলেট, মৌলভীবাজার এবং বরেন্দ্র এলাকায় কাজু ও কফি চাষ শুরু করেছেন এবং করাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে তিনি আফ্রিকা, ক্যাম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনাম থেকে বড় জাতের বীজ এনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চাষীদেরকে দিচ্ছেন। তার লক্ষ্য হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ লাখ হেক্টর জমি (চরাঞ্চল, লোনাঞ্চল, খারাঞ্চল, উঁচু, অনুর্বর এবং পতিত জমি) কাজু এবং কফি চাষের আওতায় আনা।
মু. আব্দুস ছালাম বলেন, সম্ভবত গোটা বিশ্ব বাংলাদেশকে চেনে এবং জানে দর্জীর দেশ হিসেবে আর ভিয়েতনামকে চেনে বা জানে কাজুবাদামের দেশ হিসেবে। মাত্র ১৭ বছর আগে ভিয়েতনাম কাজুবাদামের চাষ শুরু করে আজ উৎপাদন, প্রোসেসিং এবং রপ্তানিতে ১ নম্বরে উঠে এসেছে।
২০২১ সালে ভিয়েতনাম ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ টন কাজুদানা রপ্তানি করেছে। যার মূল্য ৩.৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরাও চোখ-কান খোলা রেখে আন্তরিক হলে, কাজুবাদাম উৎপাদনে সহজেই ২য় স্থান দখল করতে পারি। মু. আব্দুস ছালাম উল্লেখিত এবং উপযোগী জেলা বা অঞ্চলগুলোতে কাজু কফির চাষ বা উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চেয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি তরুণ তরুণী এবং নতুন উদ্যোক্তাদেরকে কাজু কফি শিল্প প্রতিষ্ঠায় আহবান জানান। ২০৩০ সালের মধ্যে কাজু কফির উৎপাদন এবং শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে বলে তিনি আশাবাদী।